সম্প্রতি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হলো হিরো আলমের ভাস্কর্য’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিরো আলমের ভাস্কর্য তৈরি হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এই ভাস্কর্যটি ২০১৮ সালে স্টাডি ওয়ার্ক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষার্থী নির্মাণ করেছিলেন।
গুজবের সূত্রপাত
দেশের বহুল আলোচিত ব্যক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচিত মুখ হিরো আলম গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভাস্কর্যের সঙ্গে তোলা একটি সেলফি পোস্ট করে লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরী হল আমার ভাস্কর্য।। (আর্কাইভ)।’

এর বাইরে পোস্টটিতে তিনি কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। পরবর্তীতে তার এই পোস্টের সূত্র ধরে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে ‘ঢাবিতে হিরো আলমের ভাস্কর্য’ শীর্ষক সমজাতীয় শিরোনামে সংবাদ প্রচার করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন ‘ঢাবি ছাত্র বানালেন হিরো আলমের ভাস্কর্য (দেশ রূপান্তর), হিরো আলমের ভাস্কর্য ঢাবিতে (ইনকিলাব), ৪০ হাজার টাকা খরচ করে হিরো আলমের ভাস্কর্য বানালেন ঢাবি শিক্ষার্থী (দৈনিক আমার সংবাদ)।
প্রতিবেদনগুলোর ভিতরের তথ্য ঠিক থাকলেও শিরোনামের উপস্থাপনের কারণে ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
হিরো আলমের ভাস্কর্যটি কবের?
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে স্থাপিত হিরো আলমের ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালে। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী উত্তম কুমার। উত্তম কুমার ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র।

এ প্রসঙ্গে উত্তম কুমার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিভাগের স্টাডি ওয়ার্ক হিসেবে আমরা অনেক কাজ করি। ২০১৮ সালে স্টাডি ওয়ার্ক হিসেবে হিরো আলমের ক্যারেক্টারটা নিয়ে ভাস্কর্যটা তৈরি করি। এটা শুধু ভালো লাগার জায়গা থেকেই করা। হিরো আলমকে ক্যারেক্টার হিসেবে গ্রহণ করার কারণ হচ্ছে, তাঁর চেহারার মধ্যে অন্য রকম একটা ব্যাপার আছে, যেটা আমরা ভাস্কররা খুব পছন্দ করি। ওই ধাঁচটা সাধারণ মানুষের চেহারায় থাকে না।’

২০১৮ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।

অর্থাৎ হিরো আলমের ভাস্কর্যটি সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী উত্তম কুমার তার স্টাডি ওয়ার্ক হিসেবে ২০১৮ সালে এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন।
বিভ্রান্তির নমুনা
উক্ত ঘটনায় হিরো আলমের ফেসবুক পেইজ সহ অন্যান্য পেইজ ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোর কমেন্টবক্স বিশ্লেষণ করে অনেক বিভ্রান্তিকর মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, এইচ এম শাহীন নামে একজন লিখেছেন, “Hero Alam is better than Rabindranath.” জয়দেব দে শুভ নামে একজন লিখেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন বিশ্ব কবির ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়।
আর হিরো আলমের ভাস্কর্য তৈরী হয় উত্তম বাবু উত্তম কাজ করেছে।” এমডি ইউসুফ নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন মান হীন বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।”
এমন আরও কিছু মন্তব্য দেখুন এখানে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বইমেলার প্রবেশমুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি প্রতিবাদী ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। তবে পরবর্তীতে এটি সরিয়ে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মূলত, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী উত্তম কুমার স্টাডি ওয়ার্ক হিসেবে হিরো আলমের একটি ভাস্কর্য তৈরি করেন। পাশাপাশি হিরো আলম সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উত্তম কুমারের তৈরী সেই ভাস্কর্যটির সঙ্গে ছবিও তুলেন। তবে সম্প্রতি ঐ সময়কার একটি ছবি হিরো আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে ”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরী হল আমার ভাস্কর্য।’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করেন। পরবর্তীতে তার এই পোস্টের সূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমও বিভ্রান্তিকর শিরোনামে সংবাদ প্রচার করে। ফলে ভাস্কর্যটি সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে এমন দাবিতে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর হিরো আলমের ভাস্কর্য নির্মাণের পুরোনো তথ্যকে তারিখ উল্লেখ ব্যতীত নতুন করে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jamuna TV: ঢাবিতে হিরো আলমের ভাস্কর্য
- The Report: হিরো আলমের ভাস্কর্য বানিয়েছেন ঢাবি শিক্ষার্থী