সম্প্রতি “এইমাত্র হিরো আলমের বাড়িতে র্যাবের অভিযান। ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে গ্রেফতার হিরো আলম” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ইউটিউবে প্রচারিত এরকম কিছু ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে।
ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ করায় হিরো আলমের বাসায় র্যাবের অভিযান এবং হিরো আলম গ্রেফতারের দাবিটি সত্য নয় বরং কোনরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই চটকদার ক্যাপশন ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়।
অনুসন্ধানে হিরো আলম গ্রেফতার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওর ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে হিরো আলম গ্রেফতার হয়েছে তথ্যটি প্রচার করা হলেও ভিডিওর বিস্তারিত অংশে এরকম কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।

এছাড়াও, ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার খন্ডিত অংশ প্রযুক্তির সাহায্যে যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে, হিরো আলমের ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় গণমাধ্যম The Daily Star এর অনলাইন সংস্করণে গত ৫ ফেব্রুয়ারি “এবার ওবায়দুল কাদেরকে হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে হিরো আলমের বরাতে জানা যায়,
“ওবায়দুল কাদের স্যার কথায়–কথায় বলেন, “খেলা হবে। শক্তিশালী দল হলে খেলা হবে।” তাকে জোর গলায় বলতে চাই, সবার সঙ্গে আপনাকে খেলতে হবে না। একটা নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবো, আপনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান। সুষ্ঠু একটা নির্বাচন দেন, দেখেন খেলা হয় কি না।”
তবে উক্ত বক্তব্যের পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে হিরো আলম গ্রেফতারের দাবিতে কোনো প্রতিবেদন প্রচারিত হতে দেখা যায় নি।
এছাড়াও, হিরো আলমের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে হিরো আলমকে গ্রেফতারের তথ্যের কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি।

পরবর্তীতে, জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ২০১৯ সালের ৮ মার্চ “হিরো আলম কারাগারে” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
“ডিশ ব্যবসায়ী থেকে তারকা বনে যাওয়া বগুড়ার সেই আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার হন হিরো আলম।”
পরবর্তীতে একই বছরের ১৯ এপ্রিল উক্ত মামলায় জামিনে মুক্তি পান হিরো আলম।

Screenshot from Prothom Alo website
তবে গত ০১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া ৪ ও ৬ আসনের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে হিরো আলম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ করায় গ্রেফতারের দাবির কোনো ভিত্তি খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়াও, গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারী ডি ডব্লিউ বাংলার টক শো খালেদ মুহীউদ্দিন জানতে চায় শো তে হিরো আলম লাইভ অংশগ্রহণ করেন। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় হিরো আলম ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে গ্রেফতার হন নি।

মূলত, গত ০১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া ৪ ও ৬ আসনে সংসদ সদস্য উপ নির্বাচনে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত মুখ আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। তবে নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী দুইটি আসনেই পরাজিত হয়েছেন আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। পরবর্তীতে পরাজয়ের কারণ হিসেবে ভোট গণনায় কারচুপিকে দায়ী করে গণমাধ্যমে বেশ সরব হন হিরো আলম। এরই প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে নির্বাচনের জয় লাভের প্রত্যয় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন হিরো আলম। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষাপটে হিরো আলমকে গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং চটকদার ক্যাপশন ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচারিত হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও হিরো আলমের সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রেক্ষিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। উক্ত ঘটনায় ইতোমধ্যে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ করায় হিরো আলমের বাসায় র্যাবের অভিযান এবং হিরো আলম গ্রেফতার শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজস্ব অনুসন্ধান
- ফেসবুক পেজ : হিরো আলম
- ডেইলি স্টার : এবার ওবায়দুল কাদেরকে হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ
- প্রথম আলো : হিরো আলম কারাগারে
- ডি ডব্লিউ : রাজনীতি সংস্কৃতি ও হিরো আলম