গত ২৭ নভেম্বর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। তাদের বহরের একটি গাড়ি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়িচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ট্রাকটির ড্রাইভার এবং সহকারীকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আটক ড্রাইভারের ছবি প্রকাশিত হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, আটক ড্রাইভারের ছবি, ‘আশীষ পুরোহিত’ নামের একটি বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভারতের আধার কার্ডের ছবি ব্যবহার করে তৈরি একটি কোলাজ “বুঝতে পারছেন? তাদের ২য় ঘর হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশে মুসলিম হত্যা করে ভারতে পালাবে।” শীর্ষক শিরনামে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে মূলত দাবি করা হয় যে, ওই ড্রাইভার একজন ভারতীয় নাগরিক।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ) , এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি দুর্ঘটনার ঘটনায় আটক ড্রাইভার ভারতীয় নাগরিক নন। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন একটি ঘটনায় ভারত পালানোর পথে আশীষ পুরোহিত নামের এক ব্যক্তিকে আটকের সময় তার কাছ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভারতীয় আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়। ওই পরিচয়পত্রগুলোর ছবি ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি দুর্ঘটনার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ২৯ নভেম্বর বিডিনিউজ২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আটকৃত ট্রাক ড্রাইভারের নাম মুজিবুর রহমান (৪০) ও সহকারী মো. রিফাত মিয়া (১৮)। সম্পর্কে তারা বাবা-ছেলে এবং ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকার বাসিন্দা। গত ০২ ডিসেম্বর ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
এছাড়া, ড্রাইভার মুজিবুর রহমান ভারতীয় নাগরিক দাবিতেও বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি দুর্ঘটনার ঘটনায় আটকৃত ড্রাইভারের নাম মুজিবর রহমান, আশীষ পুরোহিত নয়।
উক্ত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আশীষ পুরোহিত নামের বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভারতের আধার কার্ডের বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পরিচয় পত্রগুলোতে থাকা নামের সূত্র ধরে গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পূর্ব অলিনগর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় আশীষ পুরোহিত (৬৫) নামে এক ব্যক্তিকে স্থানীয়রা আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে। আটককৃত ব্যক্তির কাছ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভারতীয় আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, তিনি দ্বৈত নাগরিক।
উক্ত প্রতিবেদনের সাথে প্রচারিত আশীষ পুরোহিত নামের ব্যক্তির নাম ও ছবি দাবিকৃত পোস্টগুলোতে সংযুক্ত বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভারতীয় আধার কার্ডের নাম ও ছবির মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি দুর্ঘটনার ঘটনায় আটকৃত ড্রাইভার এবং আশীষ পুরোহিত ভিন্ন দুইজন ব্যক্তি।
সুতরাং, হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি দুর্ঘটনার ঘটনায় আটকৃত ড্রাইভার ভারতীয় নাগরিক দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।