বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর 21, 2023
spot_img

হাফ প্যান্ট পরিহিত ছবিটি ছোট পোশাকের বিরোধিতাকারী তরুণের নয়

সম্প্রতি “ছোট পোশাক পরে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস করা বন্ধ করুন” লেখা ফেস্টুন হাতে দাঁড়ানো তরুণের হাফ প্যান্ট ও টি-শার্ট পরিহিত ছবির দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি নারীর ‘ছোট পোশাকের’ বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়ানো তরুণ ফজলে রাব্বির নয় বরং এটি মিতুন হাসান নামের ভিন্ন এক তরুণের ছবি।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে, Shah Muhammad Helal Uddin নামের একটি ফেসবুক একাউন্টে মূল ছবিটির মালিক মিতুন হাসানকে ট্যাগ করে  ২৭ আগস্ট “এ্যালার্ট প্লিজ….(ছবির দুই ব্যক্তি আলাদা)” (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি স্ট্যাটাস খুঁজে পাওয়া যায়।

স্ট্যাটাসটিতে বলা হয়, “ট্রল করতে গিয়ে আপনারা যাচাই-বাছাই বাদ দিয়েছেন। একটু নিশ্চিত হয়ে ট্রল করুন। ছবির ডানের ব্যক্তিটি অপরাধ সংঘটনের জন্য মেয়েদের পোশাককে আলাদা দায়ী করা ব্যক্তিটি (প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ানো) নন, তিনি আরেকজন; আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড মিতুন হাসান। আরো সিম্পলি বললে, ছবির দুই ব্যক্তি আলাদা।”

এই স্ট্যাটাসটিতে মিতুন হাসান কমেন্ট করে বলেন, “আজীবন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে থাকা আমাকেই কিনা ধর্মান্ধ বানিয়ে দিলো।”

পরবর্তীতে এই কমেন্টের সূত্র ধরে মিতুন হাসানের একাউন্টে গিয়ে ১৭ আগস্ট “বয়স আমার বেশি না, ওরে টুকটুকির মা। খালি চুল কয়ডা পাইহে গেছে বাতাসে” (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

 পরবর্তীতে, মিতুন হাসানের ইন্সটাগ্রাম একাউন্টেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া এই ঘটনায় ভুক্তভোগী মিতুন হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার।

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘ভাইরাল ছবিটি আমার নয়। যে ইস্যুতে আমি কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট ছিলাম না সে ইস্যুতে আমাকে জড়িয়ে হেনস্তা করা হলো। এই ভুল তথ্য প্রচারের ফলে আমার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। যা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়। সকলের প্রতি অনুরোধ দয়া করে ফেসবুকে কোনো তথ্য শেয়ারের পূর্বে যাচাই করুন।’

অর্থাৎ ‘ছোট পোশাক পরে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস করা বন্ধ করুন’ লেখা ফেস্টুন হাতে দাঁড়ানো তরুণের হাফ প্যান্ট ও টি-শার্ট পরিহিত ছবির দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেক ব্যক্তির।

পরবর্তীতে ‘ছোট পোশাক পরে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস করা বন্ধ করুন’ লেখা ফেস্টুন হাতে দাঁড়ানো তরুণের পরিচয় অনুসন্ধানে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম NewsBangla24.com এর ওয়েবসাইটে ২৭ আগস্ট “‘ছোট পোশাকবিরোধী’ তরুণ জানেন না, কেন হয়েছিল মানববন্ধন!” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from newsbangla24 website

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফেস্টুনধারী ঐ তরুণের নাম মো. ফজলে রাব্বি, তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যান্টিনে কাজ করেন। ছবি ভাইরাল হওয়ার পর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। তাকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমটি আরও জানায়, সেদিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে অফিস সহায়ক পদে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন।

এছাড়া তিনি ঢাবি শিক্ষার্থী নয় উল্লেখ করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদদীন হলের ছাত্র নাঈম গণমাধ্যমটিকে জানান, সে যে ক্যাম্পাসের বা ঢাবিতে পড়ে না সেটা আমার জানা ছিল না। ছবি ভাইরাল হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি। অর্থাৎ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।

মূলত, নারীর পোশাক নিয়ে হাইকোর্টের কথিত মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে গত ২৫ আগস্ট রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন করে একদল তরুণ-তরুণী। পরবর্তীতে উক্ত মানববন্ধনে ফেস্টুন হাতে দাঁড়ানো এক তরুণের ছবির সাথে ভিন্ন আরেক তরুণের টি-শার্ট ও হাফ প্যান্ট পরিহিত ছবি সংযুক্ত করে একই ব্যক্তির ছবি দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে এক তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে করা মামলায় গত ১৬ আগস্ট অভিযুক্ত মার্জিয়া আক্তারের (শিলা) জামিন শুনানি পরবর্তী সময়ে দেশীয় মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম আসামি পক্ষের আইনজীবীর বরাত দিয়ে উক্ত মামলার বিষয়ে আদালতের বেশকিছু মন্তব্য প্রচার করে। গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন কিছু সংবাদ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসামি পক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন, ‘আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুলশান–বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরনের পোশাক পরে রাস্তায় বের হয় না। সেখানে গ্রামের মতো একটি জায়গায় পাবলিক প্লেসে এ রকম পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না। যেমন খুশি তেমন পোশাকের নামে আমাদের সোসাইটির কালচারকে ধ্বংস করতে পারে না। ওই মেয়ে যে ধরনের পোশাক পরিহিত ছিল সেটা আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বেমানান। যে কারণেই প্রতিবাদের শিকার হয়েছিল।’

গণমাধ্যমে উক্ত সংবাদ প্রচারের পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হলে পরদিন ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা (হাইকোর্ট) তো আদেশে পোশাক নিয়ে কিছুই লিখিনি, আমরা ভিডিও দেখে আইনজীবীদের কাছে শুধু জানতে চেয়েছি। ভিডিও দেখে রাষ্ট্রেপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছি, এমন ড্রেস পরে এমন গ্রাম এলাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কিনা?’

সুতরাং, নারীর ‘ছোট পোশাকের’ বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়ানো তরুণ ফজলে রাব্বির ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img