গ্রিনল্যান্ডে কোনো সবুজ নেই, আইসল্যান্ডে কোনো বরফ নেই শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি “পৃথিবীর উপর থেকে তো সেদিনই বিশ্বাস উঠে গেছে, যেদিন শুনলাম আইসল্যান্ড সবুজে ঢাকা একটা দেশ আর গ্রীনল্যান্ড বরফের দেশ’।আসলেই তো! আইসল্যান্ডে যদি বরফই না থাকে, তাহলে দেশটার নাম এমন হলো কেন? আবার গ্রীনল্যান্ডে যদি সবুজই না থাকে, তাহলে এর নামের সঙ্গে ‘গ্রীন’ আসলো কীভাবে? এই প্রশ্নটা নাহয় আপনাদের কাছেই ছেড়ে দিলাম” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইসল্যান্ডে কোনো বরফ নেই এবং গ্রীনল্যান্ডে কোনো সবুজ নেই শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং আইসল্যান্ডের ১১ শতাংশ ভূখন্ডে সম্পূর্ণ বরফ এবং গ্রীনল্যান্ডের ২০ শতাংশ ভূখন্ড বরফহীন সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত।

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, National Geographic এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকাশিত “Is Iceland Really Green and Greenland Really Icy?” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, 

“Over 80 percent of Greenland is covered in ice, but its grass was probably greener back in the summer of A.D. 982, when Erik the Red first landed in the southwest of the island.”

Screenshot Source: National Geographic

অর্থাৎ, গ্রিনল্যান্ডের ৮০ শতাংশ জমি বরফে আচ্ছাদিত থাকলেও ৯৮২ অব্দের পূর্বে এ অঞ্চল অনেকটা সবুজে আচ্ছাদিত ছিলো যখন এরিক দ্য রেড প্রথম দ্বীপটির দক্ষিণ-পশ্চিমে আসে।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে গ্রীনল্যান্ডে কোনো সবুজ নেই বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটি সত্য নয়।

এছাড়াও আইসল্যান্ড নিয়ে উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়,

“Meanwhile, thanks to the Gulf Stream, Iceland’s sea surface temperatures can be about 10ºF (6ºC) warmer than Greenland. The milder climate means summers are intensely green throughout Iceland, even though 11 percent of that country is still covered with permanent ice cap. Vatnajökull is Europe’s largest glacier—a piece of ice the size of Puerto Rico.”

Screenshot Source: National Geographic

অর্থাৎ, আইসল্যান্ডের সমুদ্রপৃষ্ঠ গ্রিনল্যান্ড থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার মানেই গ্রীষ্মে ঘন সবুজে ছেয়ে যায় সম্পূর্ণ দ্বীপ। যদিও দেশের ১১ শতাংশ জমি কঠিন বরফ শিলায় ঢেকে আছে। “Vatnajökull” ইউরোপের সবচেয়ে বড় বরফখণ্ড যা পুয়ের্তো রিকোর সমান বড়।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, আইসল্যান্ডে কোনো বরফ নেই শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় কেননা উক্ত দেশের ১১ শতাংশ ভূখন্ড সম্পূর্ণ বরফে আচ্ছাদিত।

নামকরণের পেছনের গল্প

আইসল্যান্ড কিংবা গ্রীনল্যান্ড নামকরনের পেছনে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত আছে। Discovery Place এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালে ১০ জুন  “BONUS: Why is Iceland green and Greenland icy?” শীর্ষক শিরোনামের একটি আর্টিকেল পাওয়া যায়। উক্ত আর্টিকেল থেকে জানা যায়,

“One Norwegian Viking named Floki traveled to the island with family and livestock and settled in the western part of the country. However, his settlement attempt failed when he did not harvest any hay for his animals. The story goes that after his loss, he climbed a mountain in the spring to check the weather where he saw drift ice out in the water and, hence, changed the island’s name to Iceland.”

Screenshot Source: Discovery Place

নরওয়ে থেকে ফলকি নামের একজন ভাইকিং তার পরিবার ও জীবনধারণের সকল দ্রব্য নিয়ে আইসল্যান্ডের পশ্চিম প্রান্তে বসতি স্থাপন করেন। কিন্তু তার বসতি স্থাপনের চেষ্টা বিফল হয় কেননা তার পশুপাখির জন্য কোনো খাদ্যশস্য সেখানে চাষ করা যায় নি। সে তখন আশেপাশে দেখার জন্য এক পাহাড়ের উপর উঠে দেখতে পেলেন বরফের খন্ড পানিতে ভাসছে। সেখান থেকে দ্বীপটির নামকরণ করেন আইসল্যান্ড।

এছাড়াও গ্রিনল্যান্ড নামের পেছনেও প্রচলিত গল্প আছে। National Geographic এর তথ্যমতে, 

“Ice core and mollusk shell data suggests that from A.D. 800 to 1300, southern Greenland was much warmer than it is today. This means that when the Vikings first arrived, the Greenland name would make sense. But by the 14th century, maximum summer temperatures in Greenland had dropped. Lower temperatures meant fewer crops and more sea ice, forcing the local Norse population to abandon their colonies.”

Screenshot Source: National Geographic

অর্থাৎ, কঠিন বরফ ও এর ভেতরে পাওয়া প্রাচীন শামুক প্রজাতীর প্রানী হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, ৮০০ থেকে ১৩০০ অব্দের পূর্বে গ্রিনল্যান্ড এখনকার থেকে বেশ উষ্ণ ছিলো। কিন্তু ১৪০০ শতাব্দীর পরবর্তী সময় থেকে তাপমাত্রা দ্রুতই হ্রাস পেতে থাকে। নিম্ন তাপমাত্রা আর স্বল্প খাদ্যশস্যের জন্য সেখানকার অধীবাসীদের নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে হয়।

মূলত, আইসল্যান্ড এবং গ্রিনল্যান্ডের নামকরনের পেছনে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত থাকলেও আইসল্যান্ডে কোনো বরফ নেই এবং গ্রিনল্যান্ডে কোনো সবুজ নেই দাবিটি সত্য নয়। কেননা আইসল্যান্ডের ১১ শতাংশ অঞ্চল সম্পূর্ণ বরফে আচ্ছাদিত এবং পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম স্থান। একইসাথে গ্রিনল্যান্ডের ৮০ শতাংশ অঞ্চল বরফে আচ্ছাদিত থাকলেও ৮০০ থেকে ১৩০০ অব্দের পূর্বে সেখানে আবহাওয়া বেশ উষ্ণ ছিলো যা পরবর্তীতে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বরফে ছেয়ে যায়। তবে এখনও গ্রিনল্যান্ডের ২০ শতাংশ জমিতে কোনো বরফ নেই অর্থাৎ সবুজ ভূমি।

সুতরাং, আইসল্যান্ডে কোনো বরফ নেই এবং গ্রিনল্যান্ডে কোনো সবুজ নেই শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

  1. National Geographic : Is Iceland Really Green and Greenland Really Icy?
  2. Discovery Place : BONUS: Why is Iceland green and Greenland icy?

আরও পড়ুন

spot_img