সম্প্রতি “গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বোরকা-হিজাব নিষিদ্ধ করলো কলেজ প্রশাসন।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বোরকা-হিজাব নিষিদ্ধের তথ্যটি সঠিক নয় বরং শিক্ষার্থীদের বোরকা পরতে হলে কলেজ ড্রেসের উপর সেটি পরতে বলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ওয়েবসাইটে গত ২২ আগস্ট প্রকাশিত বোরকা ও হিজাব পরিধান সম্পর্কিত জরুরী নোটিশ (আর্কাইভ) শিরোনামে একটি নোটিশ খুঁজে পাওয়া যায়। নোটিশ থেকে জানা যায়, উক্ত কলেজে বোরকা বা হিজাব নিষিদ্ধ করা হয় নি। নোটিশ প্রকাশের দিন (২২ আগস্ট) শিক্ষার্থীরা পূর্বের ন্যায় বোরকা ও হিজাব পরে ক্লাস করেছে।
একই ওয়েবসাইটে আগের দিন অর্থাৎ গত ২১ আগস্ট প্রকাশিত বোরকা পরিধান সম্পর্কিত শিরোনামে আরো একটি নোটিশ খুঁজে পাওয়া যায়। নোটিশে বলা হয়, কলেজের নিয়ম অনুযায়ী কেউ বোরকা পরিধান করতে হলে কলেজ ড্রেস পরে তার উপরে বোরকা পরতে পারবে। কিছু শিক্ষার্থী এই নিয়ম ভঙ্গ করছে বলে উল্লেখ করা হয় উক্ত নোটিশে।
বোরকা নিষিদ্ধের তথ্য কেনো ছড়ালো?
বোরকা নিষিদ্ধের বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে ফেসবুকে Gazipur Cantonment College, Golden Jubilee (সুবর্ণ জয়ন্তী) 2042 নামক গ্রুপে শেখ মোহাম্মদ সাদিক নামে একজন শিক্ষকের উক্ত বিষয়ে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে ওই শিক্ষক লিখেছেন, “এটা নেহায়েত একটা গুজব ও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা। কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি।”
উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কিছু শিক্ষক (মোঃ আবদুল জলিল নামে একজনের নাম এসেছে কয়েকবার) শ্রেণীকক্ষে এসে শিক্ষার্থীদের বোরকা পরতে নিষেধ করেছেন। Jabin Tasmin নামে একজন শিক্ষার্থী কমেন্টে লিখেন, “গত ১৬ আগস্ট রোজ মঙ্গলবার ৩জন (একাধিক) শিক্ষক এবং গতকাল রোজ রবিবার একজন শিক্ষক প্রতিটি ক্লাসে এসে ‘বোরকা পরিধান করা যাবে না’ (চেহারা ঢেকে রাখা তো দূরের বিষয়) মর্মে নোটিশ দিয়ে গেছেন।”
কলেজটির ইউনিফর্ম বিষয়ক নির্দেশনায় কী আছে?
কলেজটির ওয়েবসাইটে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী কলেজ ইউনিফর্ম সম্পর্কিত শিরোনামে একটি নোটিশ খুঁজে পাওয়া যায়। নোটিশে ছাত্রীদের পোশাক সম্পর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়, ছাত্রীদের সাদা স্যালোয়ার, সাদা কামিজ, সাদা ওড়না পরতে হবে। নোটিশে বোরকা সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় নি।
অধ্যক্ষ কী বলছেন?
শিক্ষার্থীরা মোঃ আবদুল জলিল নামে যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন সেই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তার সাড়া পাওয়া যায় নি।
পরবর্তীতে সার্বিক বিষয় নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় কলেজটির অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমির হোসেন ভুঁইয়া’র সাথে। তিনি বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। শিক্ষকরা বলেছেন বোরকার নিচে কলেজ ড্রেস পরে আসতে। কলেজ ড্রেস ছাড়া যাতে শুধু বোরকা পরে কেউ না আসে। এটিই বুঝতে ভুল করেছে শিক্ষার্থীরা।”
তিনি জানান, ভুল বোঝাবুঝির প্রেক্ষিতে তিনি শিক্ষকগণকে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে সঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমন নোটিশ দিতে হলো কলেজ কর্তৃপক্ষকে – এমন প্রশ্নে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমির জানালেন, শিক্ষকরা প্রায়ই লক্ষ্য করছেন শিক্ষার্থীরা বোরকা পরে আসছে কিন্তু নিচে কলেজের ড্রেস নেই। এতে করে কলেজ শেষে তারা বোরকা খুলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে করে নিরাপত্তার একটা শঙ্কা থাকে। আবার টিকটক করার মতো ঘটনাও ঘটার আশঙ্কা দেখছেন বলে জানান তিনি। এর প্রেক্ষিতে উক্ত নোটিশ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
মূলত, সম্প্রতি গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন “কিছু শিক্ষক ক্লাসে এসে বোরকা-হিজাব পরতে নিষেধ করেছেন”। পরবর্তীতে কলেজে বোরকা হিজাব নিষিদ্ধ হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, বোরকার নিচে কলেজ ড্রেস পরে আসার নোটিশটিকে বুঝতে ভুল করেছে শিক্ষার্থীরা। কলেজের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত নোটিশে বোরকা নিষিদ্ধ হয় নি বলে জানানো হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয় ও রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বোরকা-হিজাব নিষিদ্ধ করলো কলেজ প্রশাসন শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ: ওয়েবসাইট
- কলেজ অধ্যক্ষের রিউমর স্ক্যানারকে দেওয়া বক্তব্য