রংপুরে ইউপি মেম্বারের ছেলেকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য দাবিতে গত আগস্টের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, রংপুরের পীরগাছায় আওয়ামী সমর্থীত এক ইউপি মেম্বারের ছেলেকে বাসা থেকে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়িতে পুলিশ কর্তৃক হৃদয় নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করার ঘটনার ভিডিও। তাছাড়া, সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছায় আওয়ামী সমর্থিত এক ইউপি মেম্বারের ছেলেকে বাসা থেকে ডেকে এনে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে দাবির বিষয়ে গণমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে মূল ধারার গণমাধ্যম এটিএন বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ‘গাজীপুরে শর্টগান ঠেকিয়ে গুলি করা পুলিশ আটক । Gazipur Short gun police | akram police | police akram’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত সংবাদে দেখানো ভিডিওর সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

এটিএন নিউজের সংবাদটি থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্র হৃদয় হত্যা মামলায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল এলাকা থেকে আকরাম হোসেন নামের এক কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি গাজীপুর শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

এই বিষয়ে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদ থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।

এছাড়াও, অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ‘কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা, পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট কোনাবাড়ি থানার পাশে গুলি করে কলেজছাত্র মো. হৃদয়কে হত্যা করা হয়। নিহত হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমনগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি হেমনগর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখার পাশাপাশি কোনাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গ্রেপ্তারকৃত ওই কনস্টেবলের নাম মো. আকরাম হোসেন (২২), তিনি গাজীপুর শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী সড়কের কোনাবাড়ী এলাকায় গত ৫ আগস্ট মো. হৃদয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে হৃদয় রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় শিল্প পুলিশে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য কোনাবাড়ী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় তারা হৃদয়কে রাস্তার পাশ থেকে ধরে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম অতি উৎসাহী হয়ে তার পেছন দিক থেকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের ফুফাতো ভাই মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে কিশোরগঞ্জের পারাইল এলাকা থেকে আকরামকে গ্রেপ্তার করে।’

তাছাড়া, ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ‘শটগান ঠেকিয়ে গুলি করলো পুলিশ, মামলা হলো সাংবাদিকের নামে | Konabari Ridoy Death | Jamuna TV’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত সংবাদে আলোচিত ভিডিও ও নিহত হৃদয়ের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য দেখতে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হৃদয়কে গুলি করার ঘটনার ভিডিও।

পরবর্তীতে, সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছায় আওয়ামী সমর্থীত কোনো ইউপি মেম্বারের ছেলেকে বাসা থেকে ডেকে এনে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূল ধারার গণমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গাজীপুরে পুলিশ কর্তৃক এক ব্যক্তিকে গুলি করার ঘটনার ভিডিওকে রংপুরে আওয়ামী সমর্থিত ইউপি মেম্বারের ছেলেকে বাসা থেকে ডেকে এনে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img