সম্প্রতি,‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিপেলো হেফাজত নেতা মামুনুল হক’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পাননি এবং তাকে মুক্তি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও কোনো নির্দেশ দেননি বরং গত ৮ আগস্ট তাঁর কথিত স্ত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় দুজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসায় তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। পরবর্তীতে পুনরায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ৮ আগস্ট Taza News নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিপেলো হেফাজত নেতা মামুনুল হক’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
তবে উক্ত ভিডিওর কোথাও-ই হেফাজত নেতা মামুনুল হকের মুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। ভিডিওটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, পূর্বের কোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত নিউজ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সেজন্যে অনুসন্ধানের পরবর্তী ধাপে উক্ত ভিডিওটির একটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৮ আগস্ট ‘ধর্ষণ মামলায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ | Mamunul Haque | Channel 24’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। আলোচিত ভিডিওটিতে উক্ত ভিডিওর কিছু অংশ কেটে বাদ দিয়ে ভিন্ন লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে চ্যানেল২৪ হতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলো’র অনলাইন পোর্টালে গত ৮ আগস্ট ‘ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরও দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৮ আগস্ট মামুনুল হকের কথিক স্ত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় আরও দুজন নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হকের আদালতে সাক্ষ্য দেন। সেজন্যে সেদিন সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামুনুল হককে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাঁকে আবার পুলিশের প্রহরায় কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত থেকে এটা নিশ্চিত যে, হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পাননি।
মূলত, সম্প্রতি, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিপেলো হেফাজত নেতা মামুনুল হক’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে দাবির সপক্ষে কোনো প্রকার তথ্য নেই এবং কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেরও উল্লেখ নেই। প্রকৃতপক্ষে, হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্তি পাননি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও তার কারামুক্তির বিষয়ে কোনো নির্দেশ দেননি।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেফতারের পূর্বে তার বিরোধী একাধিক মামলা থাকলেও ঠিক কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো তা পুলিশ স্পষ্ট করে জানায়নি পুলিশ।
সুতরাং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে হেফাজতে ইসলামের সাবেক নেতা মামুনুল হক মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Channel 24 youtube: ধর্ষণ মামলায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ
- Prothomalo online newsportal: ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরও দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ
- Rumor Scanner’s Own Analysis