উত্তরবঙ্গের বন্যাতেও থেমে নেই পুরোনো ছবি-ভিডিওর মাধ্যমে ভুল তথ্য 

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানিতে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এর মধ্যে সম্প্রতি দুই দফায় গজলডোবা বাঁধ দিয়ে প্রায় ১১ হাজার কিউমেক পানি ছেড়েছে ভারত। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকে তাদের কিছু জানা ছিল না। এসব ঘটনার প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে। পানিবন্দী হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ৷ এই অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে ব্যাপক আলোচনা। তারই প্রেক্ষিতে এসব মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বন্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও। এমন অন্তত ছয়টি ছবি-ভিডিও শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার যেগুলো উত্তরবঙ্গের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রচার করা হলেও আদতে এগুলো উক্ত এলাকাগুলোর বর্তমান সময়েরই নয়। 

যেমন ফেসবুকে বর্তমানে লালমনিরহাটের অবস্থা বলে দাবি করে একটি এলাকার এরিয়াল ভিউ সম্বলিত একটি ছবি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। গণমাধ্যমেও (ঢাকা প্রকাশ) একই ছবি প্রচার হচ্ছে। এমনকি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও ছবিটি একই দাবিতে প্রচার করছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাংলাদেশেরই নয়। গত ২৮ জুলাই তোলা ছবিটিতে সে সময়ে উত্তর কোরিয়ার বন্যার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। 

বন্যায় উত্তরাঞ্চলে বাড়িঘর পানির নিচে চলে গেছে, দেখা যাচ্ছে শুধু টিনের ছাদ – এমন একটি ছবি প্রচার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে ছবিটি ২০২২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। সে বছরের জুনে কুড়িগ্রামের বন্যার সংবাদে গণমাধ্যমে ছবিটি প্রচার করা হয়। 

কোমড় সমান পানিতে এক নারী একটি শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এমন একটি ছবিকেও লালমনিরহাটের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে, যা সত্য নয়। ছবিটি এই বছরেরই, তবে গত জুলাইয়ে কুড়িগ্রাম থেকে তোলা।

জুলাইয়ে কুড়িগ্রামের বন্যার আরেকটি ছবিকেও বর্তমানের উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রচার করা হচ্ছে যাতে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি বুক সমান পানিতে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন৷ এই ছবিটি অন্তত গত ০৪ জুলাই থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট যে ছবিটি বর্তমান সময়ের নয়।

শুধু ছবিই নয়, চলমান বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোনো ও ভিন্ন দেশের ভিডিও-ও প্রচার হচ্ছে৷ লালমনিরহাটের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি দাবি করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, সেতু সদৃশ একটি স্থাপনার পাশে পানির তীব্র স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে৷ তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, এই দৃশ্য নেপালের। দেশটির সাপ্তাকোসি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় কোশি বাঁধের সবক’টি স্লুইস গেট সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়। 

এছাড়া, গত আগস্টে পূর্বাঞ্চলের একাধিক জেলায় হওয়া বন্যার সময়ে প্রচার হওয়া একটি ভিডিও বর্তমানে উত্তরবঙ্গের দৃশ্য দাবিতে ফের বেশ ভাইরাল (, ) হয়েছে ফেসবুকে। 

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগের মতো সংকটময় পরিস্থিতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘনঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা নদীভাঙনের ভয়াবহতা এদেশের মানুষের কাছে এখন চেনা দূর্যোগ। এসব পরিস্থিতিতে জানমাল রক্ষা এবং ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের ভীড়ে গুজবের প্রচার এবং প্রসার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক বিষয়গুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।  গুজবের এই ভয়াবহতা রোধে দল মত নির্বিশেষ সচেতন সকল মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।

আরও পড়ুন

spot_img