শাপলা প্রতীক না পেয়ে এনসিপির কর্মীর শাপলা ভাস্কর্য ভাঙার দাবিটি মিথ্যা

রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের প্রতীক হিসেবে তারা শুরু থেকেই শাপলা প্রতীক চেয়ে আসছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গেজেটকৃত ৫০টি প্রতীকের তালিকায় শাপলা না থাকায় প্রতীকটি তাদের দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষই অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শাপলা প্রতীক না পাওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির এক কর্মী শাপলা ভাস্কর্য ভাঙছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শাপলা প্রতীক না পেয়ে এনসিপি কর্মীর শাপলা ভাস্কর্য ভাঙার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, শাপলা ভাস্কর্য ভাঙার সাথে জড়িত ব্যক্তি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। তিনি প্রায়ই এমন অস্বাভাবিক কার্যক্রম করে থাকেন বলেও জানা যায়।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও পোস্টগুলো পর্যালোচনা করে পোস্টগুলোতে ঘটনাস্থলটি কোথায় সে বিষয়ক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ভিডিওগুলো পর্যালোচনা করে শাপলা ভাস্কর্যের পাশেই ‘দারুল হক মাদরাসা ও মসজিদ’ নামের একটি সাইনবোর্ড লক্ষ করা যায়। 

পরবর্তীতে জিওলোকেশন বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায়, আলোচিত শাপলা ভাস্কর্য ও দারুল হক মাদরাসা ও মসজিদটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যমেড্ডার মোদক বাড়ির মোড় এলাকায় অবস্থিত। 

Comparison by Rumor Scanner 

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে পরবর্তীতে Kawsar Habib নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৮ অক্টোবর প্রচারিত একই ঘটনার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনামেও উল্লেখ করা হয় উক্ত ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। পাশাপাশি বলা হয়, শাপলা ভাস্কর্য ভাঙতে ওঠা ওই ব্যক্তি নেশাগ্রস্থ একজন পাগল। ভিডিওটিতেই তাই বলতে শোনা যায়।

Screenshot: Facebook 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় গণমাধ্যম News24 Brahmanbaria এর ফেসবুক পেজে একই ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আলোচিত ওই ভাস্কর্য ভাঙতে ওঠা যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। ঘটনার দিন ওই যুবক হঠাৎ করেই শাপলা ভাস্কর্যে উঠে তা ভাঙার চেষ্টা করতে থাকেন। এসময় উপস্থিত জনতা তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি তাদের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করায় উপস্থিত জনতা তাকে মারধার করে। এছাড়াও পরবর্তীতে ভিডিওটিতে তাকে ভাস্কর্য থেকে নামিয়ে আনতে দেখা যায়। তবে প্রতিবেদনটির কোথাও ওই যুবকের এনসিপির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি। 

ঘটনাটির বিষয়ে মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে কোনো তথ্য না পাওয়ায় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ওয়াসেল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ঘটনাটি গত ২ অক্টোবরের। শাপলা ভাস্কর্য ভাঙতে ওঠা ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি প্রায়ই শহরের বিভিন্ন স্থানে এমন অস্বাভাবিক কার্যক্রম করে থাকেন। তার সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার তথ্য কখনো পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানান। 

সুতরাং, শাপলা প্রতীক না পাওয়ায় এনসিপির কর্মী শাপলা ভাস্কর্য ভাঙছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Google Maps
  • Kawsar Habib Facebook Post
  • News24 Brahmanbaria Facebook Post
  • Statement of Wasel Ahmed, Media Personnel, Brahmanbaria
  • Rumor Scanner’s Analysis

আরও পড়ুন

spot_img