হাসিনা-রেহানাকে ফিরিয়ে আনা ও নিজের আটক হওয়া নিয়ে ফেরদৌসের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দাবী করা হচ্ছে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন নায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ। ভিডিওটিতে আরো দাবি করা হয় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে আটক করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে মুচলেকা দিয়ে ছাড়াও পেয়েছেন তিনি।

টিকটকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এ বিষয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে ২৪ হাজারের অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটিতে ১৩৬ টি মন্তব্য করা হয়েছে। ভিডিওটির মন্তব্যঘর ঘুরে অধিকাংশ নেটিজেনকে উক্ত দাবির পক্ষে মতামত দিতে দেখা গেছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেরদৌস এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং তার আটক হওয়ার কোনো তথ্যও গণমাধ্যমে আসেনি বরং পুরোনো কিছু ছবি ও ভিডিওর ক্লিপ ব্যবহার করে আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “জয় পেলে শেখ হাসিনা ও রেহানাকে দেখে রাখব: ফেরদৌস | Ferdous Ahmed | National Election 2024” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের একাংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচনি প্রচারণার সময়ের ভিডিও এটি। ভিডিওতে ফেরদৌসকে বলতে শোনা যায় – “আমার দুই মেয়ে নুজহাত-নামিরা। আমি যেরকম সারাক্ষন ওদেরকে বুকে আগলে রাখি, ইনশাআল্লাহ আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি এই ঢাকা-১০ আসনের দুই কন্যা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ছোট আপা শেখ রেহেনা: আপনাদের দুইজনের দায়িত্ব আমার। আমি আপনাদেরকে এই এলাকায় দেখে শুনে রাখবো ইনশাআল্লাহ।” তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই প্রতিবেদনের কিছু ক্লিপ ব্যবহার করেই আলোচিত ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে ফেরদৌস  তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছে বলে দাবি করেছে যা আদতে অসত্য। 

আলোচিত ভিডিওতে আরো দাবী করা হয়, ৫ আগস্টের পরে আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি আটক হয়েছেন নায়ক ফেরদৌস। তবে গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর বরাতে তার আটকের কোনো তথ্য মেলেনি।  

আলোচিত ভিডিওতে তার আটকের প্রমাণস্বরূপ একটি ছবি দেখা যায় যেখানে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় পুলিশের পাশে নায়ক ফেরদৌসকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি কচুয়ায় পৌর বাজারে অবস্থিত ইকরা ভ্যারাইটিজ স্টোরের স্বত্বাধীকারী আবুল বাশার (৩৮) হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি আবু ছালেহ মুসাকে (২০) গ্রেফতারের ছবিকে সম্পাদনা করে আবু ছালেহ মুসার মুখমন্ডলের অংশে ফেরদৌসের মুখমন্ডল বসিয়ে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়।

Comparison: Rumor Scanner 

সুতরাং, সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌস শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং জনগণের কাছে আটক হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img