গত ২৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘মঞ্চ ৭১’-এর আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করে পুলিশ। এরই প্রেক্ষিতে , “জামিনে মুক্তি পেল লতিফ সিদ্দিক মুক্তি পেয়ে জয় বাংলা স্লোগান” ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি ৫০ হাজারের ও অধিক বার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লতিফ সিদ্দিকী জামিনে মুক্তি পাননি। গত ০৩ সেপ্টেম্বর দিনে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন করা হলেও সন্ধ্যায় সেই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তি আমজনতার দলের সদস্যসচিব মো. তারেক রহমান। উক্ত ভিডিওতে তিনি লতিফ সিদ্দিকীর জামিন পাওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে তারেক রহমানকে বলতে শোনা যায়, “উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ওনাকে এ ধরনের হয়রানি সমর্থন করি না। আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি চাই না। একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই৷ মুক্তিযোদ্ধারা কথা বলতে পারবে না এর চেয়ে বড়ো সার্বভৌমত্বের সংকট বাংলাদেশের কখনো ই হয়নি। আমি পান্না ভাইকেও অনেক বেশি পছন্দ করি না এরকম না। কিন্তু পান্না ভাইকে হ্যান্ডকাফ নিয়ে একজন সাংবাদিক দাঁড়াচ্ছে, হ্যান্ডকাফ ঝোলাচ্ছে এটা আমাদের সম্মানের না। এটা আমাদের বুঝতে হবে। এই বুঝ যাদের নেই তাদের আমরা কিভাবে বোঝাবো?…… ” প্রায় ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের এই বক্তব্যের কোথাও লতিফ সিদ্দিকী মুক্তি পেয়েছেন এমন দাবি তারেক রহমানকে করতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে, মোঃ তারেক রহমানের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেফতার ইস্যুতে গত ২৯ আগস্ট প্রচারিত আমজনতা দলের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তারেক রহমান স্বাক্ষরিত এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আমজনতা দলের ২৯ আগস্টের প্রেস ব্রিফিংয়ের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে
নির্বাচন কমিশনের আগামী ১৩ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণাকে স্বাগত জানানো হয়। এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্য সন্তান, মুক্তিযোদ্ধারা যেই দলেরই হোক তাদের যেন হেনস্থা, অসম্মান ও শারীরিক ভাবে লাঞ্চনার কোন ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে আহবান জানানো হয়। পাশাপাশি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি স্মরণ করে, সাংবাদিকদের হুমকি হয়রানি আটক হতে বিরত থাকার আহবান জানানো হয়।
লতিফ সিদ্দিকীর বর্তমান অবস্থা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইয়ে গতকাল (৩ সেপ্টেম্বর) “আদালতে জামিন চেয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জামিনের আবেদন করেন বলে নিশ্চিত করেছেন লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী কায়েস আহমেদ।
পরবর্তীতে গতরাতে দ্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন দাখিলের কয়েক ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তার আইনজীবী তাহমিম মহিমা বাঁধন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অর্থাৎ, উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটা নিশ্চিত যে, লতিফ সিদ্দিকী কারাগারেই আছে।
সুতরাং, লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তি পাওয়ার দাবিটি ভুয়া ও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- মো: তারেক রহমান – Facebook Post
- Prothom Alo – আদালতে জামিন চেয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী
- Daily Star – লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন প্রত্যাহার করেছেন আইনজীবী