মুনতাহার আসামী পক্ষের আইনজীবী দাবিতে ভিন্ন আইনজীবীর ছবি প্রচার

গত ৩ নভেম্বর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ৬ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন। এরপর ৭ দিন কেটে গেলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে সিলেটের কানাইঘাট থানায় জিডি এবং পরে অপহরণ মামলা করেন মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ। ৯ নভেম্বর রাতে প্রতিবেশী মার্জিয়াকে সন্দেহের ভিত্তিতে আটক করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। ওই রাতেই ফজরের আজানের আগে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবি মুনতাহার মরদেহ বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে তুলে অন্য একটি পুকুরে ফেলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন স্থানীয়দের কাছে। শিশু মুনতাহা হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় দেশব্যাপী৷ সম্প্রতি এরই প্রেক্ষিতে মুনতাহার ছবির পাশাপাশি অপর আরেক ব্যক্তির ছবি সংযুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, উক্ত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ এবং তিনি একজন আইনজীবী যিনি মুনতাহার হত্যায় আটককৃতদের পক্ষে আদালতে মামলা লড়বেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি আইনজীবী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর নয় বরং এটি আইনজীবী নিজাম উদ্দিনের ছবি। ছবির ব্যক্তি মুনতাহার হত্যায় আটককৃতদের পক্ষেও মামলা লড়ছেন না। প্রকৃতপক্ষে মুনতাহা হত্যা মামলায় আটককৃতদের পক্ষে মামলা লড়তে যাওয়া আইনজীবী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ভিন্ন আরেক ব্যক্তি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবির ব্যক্তির বিষয়ে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Nizam Uddin নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১০ নভেম্বরে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির ব্যক্তির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “সুযোগ পেলে আমি মুনতাহার ভাই হিসেবে সব রকম আইনী সহযোগিতা দিতে চাই। তাহলে  নিজেকে কিছুটা দায় মুক্ত মনে হবে। আমি মুনতাহার ভাই, এডভোকেট নিজাম উদ্দিন মোবাইল নম্বর:০১৭১৫৭৪৪৭৪৭”। অর্থাৎ, পোস্টে তিনি মুনতাহা হত্যায় আটককৃতদের নয় বরং মুনতাহার পক্ষকে সাহায্য করতে চেয়েছেন এবং তার নাম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ নয় বরং, অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন। 

নিজাম উদ্দিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে এবং তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্টকৃত পুরোনো ছবি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি নিজাম উদ্দিনের আসল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। তাছাড়া, তার উক্ত পোস্টটিতে সংযুক্ত মোবাইল নাম্বারটি অজানা নাম্বার চেনার ক্ষেত্রে সাহায্য করা প্ল্যাটফর্ম ট্রুকলারে অনুসন্ধান করলে অ্যাডভোকেট নিজাম ভাই হরিপুর নামে কারোর সেভ করা দেখা যায়।

পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আইনজীবী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর বিষয়েও অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে Adv Mohammad Shohidullah নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৩ নভেম্বরে একটি পোস্ট হতে দেখা যায়। পোস্টটিতে তিনি উল্লেখ করেন, তাকে জেলা লিগ্যাল এইড থেকে মুনতাহা হত্যা মামলায় আটককৃত আসামীদের হয়ে মামলা লড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে মামলাটিতে তার এরূপ সম্পৃক্ততায় যারা বাজে মন্তব্য করছেন, তাদেরকে বাজে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন তিনি। উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে আইনজীবী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর কয়েকটি ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ছবির ব্যক্তির সাথে বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।

Face Comparison : Rumor Scanner

সুতরাং, প্রচারিত ছবিটি মুনতাহার হত্যায় আটককৃতদের পক্ষে মামলা লড়তে যাওয়া আইনজীবী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।  

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img