সম্প্রতি, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রসঙ্গ নিয়ে বলা কথার জন্য আহমাদুল্লাহ তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং তারপর পোস্টটি মুছে দিয়েছেন মর্মে দাবি করা হচ্ছে। দাবিটির সাথে আহমাদুল্লাহ এর ক্ষমা চাওয়ার পোস্ট দাবি করে একটি স্ক্রিনশটও প্রচারিত হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শায়খ আহমাদুল্লাহ ক্ষমা চেয়ে এরকম কোনো পোস্ট দেননি, বরং হজযাত্রী হাজীদের জন্য শায়খ আহমাদুল্লাহ এর লিফলেট সংগ্রহের আহ্বানের পোস্টটি সম্পাদনা করে উক্ত দাবি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে আহমাদুল্লাহ এর ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে এমন কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। অতঃপর, প্রচারিত স্ক্রিনশটগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে লক্ষ্য করা যায়, সকল পোস্টেই একই সংস্করণের স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হচ্ছে। দাবিকৃত স্ক্রিনশট অনুসারে ফেসবুকে কমপক্ষে এক ঘন্টা পোস্টটি বহাল ছিল। কিন্তু আলোচিত স্ক্রিনশটটি ছাড়া কথিত ঐ পোস্টের স্ক্রিনশটের অন্য কোনো সংস্করণ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, দাবিকৃত পোস্ট ও আহমাদুল্লাহ এর অন্যান্য পোস্ট তুলনা করলে ভাষা ও ব্যাকরণগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়৷ প্রচারিত স্ক্রিনশটের লেখার মধ্যে কোথাও কোনো দাঁড়ি, কমা কিংবা বিরামচিহ্ন নেই, যেখানে শায়খ আহমাদুল্লাহ এর অন্যান্য পোস্টে বিরামচিহ্নের পর্যাপ্ত ব্যবহার থাকে।
অধিকতর অনুসন্ধানে গত ১০ মে তারিখে হাজীদের জন্য আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে বিনামূল্যে শায়খ আহমাদুল্লাহ সংকলিত লিফলেট নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আহমাদুল্লাহ এর পেজ থেকে পোস্ট দিতে দেখা যায়। উক্ত পোস্টের প্রতিক্রিয়া সংখ্যা, মন্তব্য এবং শেয়ার সংখ্যার সাথে প্রচারিত স্ক্রিনশটটির প্রতিক্রিয়া সংখ্যা, মন্তব্য এবং শেয়ার সংখ্যার হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যা প্রমাণ করে উক্ত পোস্টটি সম্পাদনা করে আহমাদুল্লাহ ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।

তাছাড়া, গত ১৬ মে তারিখে আহমাদুল্লাহ এর পেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা সম্পর্কে করা একটি পোস্টের মন্তব্যে পেজের অ্যাডমিনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, প্রচারিত স্ক্রিনশটটি আহমাদুল্লাহ এর পেজ থেকে প্রচার করা হয়নি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুফতী গিয়াসউদ্দিন তাহেরী অভিযোগ করেছেন, ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে শায়খ আহমাদুল্লাহ বেয়াদবি করেছেন। কারণ শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। নবুয়ত লাভের আগে নবি হওয়া যায় না।’ পরবর্তীতে, উক্ত প্রেক্ষাপটে শায়খ আহমাদুল্লাহ এর ক্ষমা চাওয়ার দাবি ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও, এর বিপরীতে একই কায়দায় মুফতী গিয়াসউদ্দিন তাহেরীর পোস্ট সম্পাদনা করে তাহেরী ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতেও পোস্ট করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

মূলত, গত ১০ মে তারিখে হজযাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে শায়খ আহমাদুল্লাহ সংকলিত একটি লিফলেট নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আহমাদুল্লাহ এর পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। উক্ত পোস্টটি সম্পাদনা করে আহমাদুল্লাহ ক্ষমা চেয়েছেন এবং অতঃপর পোস্টটি মুছে দিয়েছেন মর্মে ফেসবুকে দাবি প্রচারিত হচ্ছে।
সুতরাং, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে মন্তব্যের জন্য নিজের পেজে পোস্ট করে আহমাদুল্লাহর ক্ষমা চাওয়া এবং তারপর পোস্ট মুছে দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Ahmadullah (Facebook Page) – Ahmadullah
- Ahmadullah’s post – ❏ আপনি কি কোনো হজ এজেন্সির কর্ণধার?
- Jahangir Sunni Media – শায়খ আহমাদুল্লাহ কে বাংলা ওয়াশ | Mufti Giasuddin Tahery
- Rumor Scanner’s own analysis