“বুয়েটে পড়তে তিন নারী শিক্ষার্থীকে মামলা করতে হয়” শীর্ষক শিরোনামসহ বিভিন্ন শিরোনামে তিনজন নারীর ছবি সম্বলিত একটি তথ্য বিগত কয়েক বছর যাবত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
ভাইরাল কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবির ঐ তিন নারী বুয়েটের প্রথম নারী শিক্ষার্থী হলেও বুয়েটে পড়ার জন্য তাদেরকে কোনো মামলা করতে হয়নি বরং তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী-ই বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবরে দৈনিক প্রথম আলোতে ‘আমাদের দেখতে ভিড় লেগে যেত’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

মূলত, তৎকালীন সময়ে নারী শিক্ষার্থী সংখ্যা কম হওয়ায় ইপুয়েটে (পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বুয়েটে রুপান্তরিত হয়) মেয়েদের ভর্তি নেওয়া হতো না। পরবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং পুর প্রকৌশল বিভাগে না পড়ার শর্তস্বাপেক্ষে ঐ তিন নারী শিক্ষার্থী ইপুয়েটে (বর্তমান বুয়েট) ভর্তি হোন।
উক্ত বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে, ঐ তিন নারীর একজন খালেদা শাহারিয়া (৭২) জানান, ‘আমি আর শিরীন তখন ইডেন কলেজে পড়ি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ইঞ্জিনিয়ারই হব। তখন প্রথম বর্ষে একটিই সাধারণ বিভাগ ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে পুর, তড়িৎ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ ভাগ হতো।’ তিনি আরও জানান পুরকৌশলে মেয়েদের পড়তে দেওয়া হতো না। কারণ এই বিভাগে পড়লে সাভারে এক মাসের জন্য থাকতে হবে সার্ভের জন্য। তাই তিনজনকে শর্ত দেওয়া হলো, তাঁরা পুরকৌশলে পড়তে পারবেন না। শর্ত মেনেই ভর্তি হন তাঁরা এবং দ্বিতীয় বর্ষে উঠে শিরীন ও খালেদা তড়িৎকৌশল নিয়েছিলেন এবং প্রকৌশলী হিসাবে তাদের পড়াশুনা শেষ করেছিলেন। তাদের ছবি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যের বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ‘তথ্য বিকৃতি করে কারা যেন এ কথা ছড়িয়েছে। আমাদের মামলা করতে হয়নি’। এছাড়া, ২০২০ সালের ২৯ মার্চে টিবিএস নিউজের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে খালেদা শাহারিয়ার কবির ও শিরীন সুলতানা বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৭০ সালে মনোয়ারা বেগম কেমিকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি পান।
আরো পড়ুনঃ বিমানবন্দরের মেঝেতে শুয়ে থাকা ছবিটি এমপি মুরাদের নয়
উল্লেখ্য, নারী সংক্রান্ত বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই এই তথ্যটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।
অর্থাৎ, বুয়েটে পড়তে তিন নারী শিক্ষার্থীকে মামলা করতে হয়েছিলো শীর্ষক সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
- Claim Review: বুয়েটে পড়তে তিন নারী শিক্ষার্থীকে মামলা করতে হয়
- Claimed By: Facebook Posts
- Fact Check: False
[/su_box]
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo: https://www.prothomalo.com/life/%E2%80%98%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A7%9C-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%A4%E2%80%99
- TBS News: https://www.tbsnews.net/women-empowerment/when-3-women-broke-glass-ceillling-buet-62431