সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার দাবিটি গুজব

সম্প্রতি সিলেটে অনুষ্ঠিত বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার দাবিতে একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো সঠিক নয় বরং পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার দাবিগুলো ভুয়া।

ভিডিওগুলোর সত্যতা অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম পুরো ভিডিওগুলো যাচাই করে।

এর মধ্যে Padma TV নামের একটি ফেসবুক পেইজে গত ১৮ নভেম্বর “সিলেট রক্তা’ক্ত। আ’গ্নেয়গিরির মত ফুসে উঠছে সিলেট।মা’র খেয়েই ৬ পুলিশ নিহত” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটি যাচাই করে দেখা যায়, ভিডিওটির ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময়ে পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্যা ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সূত্রে প্রতিবেদক বলেন, পাকিস্তানে পুলিশের টহল দলের উপর গুলি, নিহত ৬। পাকিস্তানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৬ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এক কর্মকর্তা ও ৫ কনস্টেবল রয়েছেন।”

অর্থাৎ ভিডিওটির ক্যাপশনে উল্লেখিত ৬ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, পাকিস্তানের।

একই পেজে গত ১৯ নভেম্বর “বিএনপির বাসবহরে বাঁধায় নি’হত-৩ পুলিশ। অবশেষে বাস ঠেকাতে ব্যর্থ।” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

৮ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির কোথাও বিএনপির বাস বহরে পুলিশের বাধা প্রদান ও এতে সংঘর্ষে ৩ পুলিশ নিহত সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ প্রতিবেদনের শিরোনামের সঙ্গে মূল ভিডিওয়ের কোনো মিল নেই।

এছাড়া বিবিসি বাংলা নিউজ নামে আরেকটি ফেসবুক পেইজে “সিলেট সমাবেশ রাতেই অঘটন” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির থাম্বনেইলে “সিলেট সমাবেশে রাতেই অঘটন! বড় মন্ত্রী-নিহত ৮ পুলিশ নিহত।” প্রদর্শন করা হয়।

তবে ৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের পুরো ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণীতে এমন কোনো তথ্যের উপস্থাপন পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ বড় মন্ত্রী-৮ পুলিশ নিহত হওয়ার এই দাবিটিও সত্য নয়।

পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যমেও সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পুলিশ সদস্য হতাহতের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি পুলিশ সদস্য হতাহতের তথ্যের অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সুদীপ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে এই ভিডিও প্রতিবেদনগুলো ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন।

মূলত, গত ১৯ নভেম্বর, শনিবার সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কেন্দ্রিক কিছু পেজ ক্লিকবেইট শিরোনামের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিহত হওয়া সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার করে। তবে মূল সংবাদ যাচাই করে প্রতিবেদনগুলোতে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া পুলিশ সদস্য হতাহতের তথ্যের অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সুদীপ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে এই ভিডিও প্রতিবেদনগুলো ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর, শনিবার সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশের আগে সিলেটে সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতি ও জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ পৃথক পৃথক পরিবহন ধর্মঘট আহবান করে। এছাড়া সমাবেশের দিন মোবাইল ইন্টারেনেট না থাকারও অভিযোগ পাওয়া যায় গণমাধ্যম সূত্রে।

সুতরাং, বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো সঠিক নয়; এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img