সিলেটে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির নেতা-কর্মী মারা যাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মৃত্যু দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ফেসবুক পোস্ট ও ইউটিউব চ্যানেলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভিন্ন ভিন্ন মৃত্যু সংখ্যা প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এখানে
পোস্টগুলো আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এখানে

Shofiq Bhai Gaming ও Padma News নামে দুইটি অনির্ভরযোগ্য পেজ থেকে বিদেশী সংবাদ উপস্থাপকদের ফুটেজ, অতীতের বিভিন্ন সমাবেশের ফুটেজ, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের ভয়েসের সাথে দেশীয় গণমাধ্যমের লোগো ও নাম ব্যবহার করে সংবাদের আঙ্গিকে এসব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। 

Padma News নামের ফেইসবুক পেজটি থেকে গত ১৬ নভেম্বর দুপুর ৩টা ১৭ মিনিটে “বিদেশী চাপে বাস বন্ধ করতে ব্যর্থ আ.লীগ। রণ’ক্ষেত্র সিলেট নিহ’ত-২”  শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট প্রচার করা হয়। তবে ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, Shofiq Bhai Gaming নামের ফেইসবুক পেইজটি থেকেও গত ১৮ নভেম্বর দুপুর ৩টা ১৭ মিনিটে “নির্বাচনে নিষিদ্ধ পুলিশ? জুম্মা শেষেই সিলেট বিএনপির সমাবেশ। বৃষ্টিরমত গুলি নিহত ৫” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। তবে Padma News এ প্রচারিত ভিডিওটির মতোই এই ভিডিওটির বিস্তারিত অংশও বিএনপি সমাবেশে মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ ছিলো না।

পরবর্তীতে উক্ত পেইজটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় সিলেটে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপি সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের মৃত্যুর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা দাবিতে বেশ কিছু ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

তবে প্রচারিত ভিডিও পোস্টগুলোর ক্যাপশন ও থাম্বনেইল ব্যতীত বিস্তারিত অংশে মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হচ্ছে।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম ‘The Business Standard’ এ গত ১৬ নভেম্বর তারিখে “হবিগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, গুলি, ৮ পুলিশসহ আহত ৩০” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় “হবিগঞ্জের লাখাইয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, পুলিশের ছোড়া গুলিতে তাদের বেশ কয়েজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে লাখাই উপজেলার বামৈ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।”

এছাড়া, দৈনিক প্রথম আলোতে গত ১৮ নভেম্বর তারিখে “কামারখন্দে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ২০” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত  সিরাজগঞ্জে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের

সংবাদবিবরণী অনুযায়ী, “সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদসহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছেন।”

উল্লিখিত দু’টি ঘটনার একটিতেও নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। এছাড়া সিলেট বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষে বিএনপির কোন নেতা-কর্মীর মৃত্যুর তথ্য মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল সূত্র হতে সিলেটে বিএনপির কোনো কর্মীর মৃত্যুর তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।

মূলত, গত ১৯ নভেম্বর সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতোই সিলেটেও সমাবেশের দিন সব ধরণের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। উক্ত বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে গত ১৬ নভেম্বর হবিগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে ৮ পুলিশসহ ৩০ জন আহত হন। এছাড়া, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে গত ১৭ নভেম্বর কয়েকশো মটোর বাইক নিয়ে শো-ডাউন করেছে সিলেট ছাত্রলীগ। এসব ঘটনায় কোনো নেতা-কর্মীর মৃত্যুর তথ্য জানা যায়নি। তবে, সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে কিছু অনির্ভরযোগ্য পেজ হতে তথ্যসূত্র ব্যতীত পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর দাবি প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া নামে এক ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া, উক্ত ঘটনায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।

প্রসঙ্গত, রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্বেও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছড়ানো গুজবকে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং,সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মী নিহতের দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img