গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫)। একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়েও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও তাদের হেনস্তা হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২৭ জন নারী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের পেছনে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে বলে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় একইরকম দাবি প্রচার করা হয় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেও। দাবি করা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন মেয়ে আন্দোলনকারী বা শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের পেছনে ঘটা ঘটনা দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা ঘটনা দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল কিংবা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও ২৭ জন নারী শিক্ষার্থী ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণচেষ্টার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি, বরং কোনোরকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যমে কিংবা কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবিটির স্বপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তা জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত একাধিক গণমাধ্যম কর্মীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবিদ হাসান আমাদের নিশ্চিত করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের পিছনে বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রচারিত দাবিটি গুজব।
আরেক সংবাদমাধ্যম বিজনেস পোস্টের ঢাবি প্রতিনিধি ইসমে আজমও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অতঃপর, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করার দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে রিউমর স্ক্যানার টিম বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দায়িত্বরত সাংবাদিক এবং আন্দোলনত শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে।
মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ইভান চৌধুরী আমাদের জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল জান্নাতও জানান একই কথা। তিনিও বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করেন।
মূলত, গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আন্দোলনরত অনেক নারী শিক্ষার্থীকে আহত এবং হেনস্তা হতে দেখা যায়। এরই প্রেক্ষিতে ফেসবুকের ভিন্ন ভিন্ন পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল কিংবা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বা ধর্ষণচেষ্টা করা হয়েছে বলে পৃথক দুইটি দাবি প্রচার করা হয়। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এমন কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত সাংবাদিক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে আলোচিত দাবিগুলো মিথ্যা বলে নিশ্চিত হয় রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বা ধর্ষণচেষ্টা করা হয়েছে মর্মে প্রচারিত দাবি দুইটি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement of Campus Journalists & Students
- Rumor Scanner’s own analysis