পিনাকী ভট্টাচার্যের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে যে, “এবার বিক্ষুব্ধ ছাত্র – জনতার দেয়া আগুনে পুড়ছে পিনাকী ভট্টাচার্যের বাড়ি।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

পিনাকী

এছাড়া, “এবার ছাত্রলীগের দেয়া আগুনে পুড়ছে পিনাকী ভট্টাচার্যের বাড়ি” শীর্ষক দাবিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পিনাকী ভট্টাচার্যের বাড়ি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বা ছাত্রলীগের আগুনে পোড়ানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং, ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইন সাইটে আমার দেশের লোগো ব্যবহার করে ভুয়া সংবাদের লিংক তথ্যসূত্র হিসেবে আলোচিত পোস্টগুলোর মন্তব্যের ঘরে উল্লেখ করে দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে দেওয়া মন্তব্যের ঘরে একটি লিংক পাওয়া যায়। লিংকটিতে প্রবেশ করে ব্লগস্পটে একটি বিনামূল্যের ডোমেইন সাইটে ‘ব্রেকিং নিউজ: ডাক্তার পিনাকী ভট্টাচার্যের গ্রামের বাড়িতে আগুন দিলো ছাত্রলীগ’ শীর্ষক শিরোনামে গত ১০ ফেব্রুয়ারির তারিখে আলোচিত বিষয়ে কথিত একটি সংবাদ প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়।

সাইটটির লোগো হিসেবে আমার দেশের লোগো ব্যবহার হলেও এর ইউআরএলে ব্যবহার হয়েছে ‘আমার দেশ’ এর ভুল বানান: amardeesh247.

কথিত সংবাদটি পড়ে দেখা যায়, এতে দাবি করা হয়েছে, “বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আজ রাত ৯টার দিকে একদল মুখোশধারী যুবক বাড়িটিতে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। … স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে প্রথমে বাড়িটির গেট ভাঙার চেষ্টা করে। পরে তারা পেট্রোল ঢেলে একাধিক স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয়রা পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করলেও ততক্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। … প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আগুন লাগানোর সময় তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকে, যা সাধারণত ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হয়। তবে, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, এটি তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে। … ফ্রান্সে নির্বাসিত অবস্থায় থাকা ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “এটি ক্ষমতাহীনদের ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের আরেকটি উদাহরণ।””

এছাড়াও কথিত উক্ত তথ্য প্রতিবেদনে ঘটনার বিষয়ে আরো কিছু দাবি করা হয়। পিনাকীর বাড়ি আগুনে পোড়ার দৃশ্যের ভিডিও দাবিতে একটি লিঙ্কও কথিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হয়। তবে উক্ত লিঙ্কে আগুনে বাড়ি পোড়ার কোনো ভিডিও পাওয়া যায়নি। কথিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে পিনাকীর বাড়ির নামফলকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে উক্ত নামফলকের ছবিটি পিনাকীর বাড়ির নামফলকের নয় বরং ভিন্ন একটি নামফলকের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার ইতোমধ্যে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

উল্লেখ্য যে, কথিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে আগুন লাগানোর জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হলেও উক্ত কথিত প্রতিবেদনের লিঙ্ককে সূত্র হিসেবে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’ আগুন লাগিয়েছে দাবিতেও প্রচার করা হয়েছে।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে উক্ত কথিত প্রতিবেদন ছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমার দেশের প্রকৃত ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। কথিত উক্ত প্রতিবেদনে বাড়ি আগুনে পোড়ার বিষয়ে পিনাকী ভট্টাচার্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা জানিয়েছেন দাবি করা হলেও তার ফেসবুক বা এক্স অ্যাকাউন্টে উল্লিখিত বিষয়ে এরূপ কোনো পোস্ট বা মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের বাড়ি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বা ছাত্রলীগ পুড়িয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img