কক্সবাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মানুষ হত্যার দৃশ্য দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন নারীকে রাস্তায় একজন ব্যক্তির কোপানোর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি সম্প্রতি কক্সবাজারে প্রকাশ‍্যে রাস্তায় সন্ত্রাসীদের কুপিয়ে মানুষ হত্যা করার দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উপরোল্লিখিত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে ২ লক্ষ ৮০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি কক্সবাজারের নয় বরং, এটি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের এলুরু জেলার গত ১০ আগস্টের ঘটনা। শিভা নামে এক সন্তান পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে তার মা নরসম্মাকে হত্যা করে। 

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চ করে ভারতের তেলেগুভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ছোটানিউজ এপ’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে গত ১১ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। সংযুক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটিতে বলা হয়, “রাস্তার ধারে মাকে কুপিয়ে দিল ছেলে! এলুরু জেলার কয়্যালাগুডেমে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। শিবা নামের এক ব্যক্তি রাস্তার ধারে শিকারি কাস্তে দিয়ে তার মা, জাক্কু লক্ষ্মীনারাসাম্মাকে কুপিয়ে দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, শিবা কিছুদিন ধরে তার মাকে জোর করছিল যেন তিনি তাদের একমাত্র বাড়িটি বিক্রি করে সেই টাকা তাকে দেন। রবিবার (১০ আগস্ট) একই বিষয় নিয়ে ঝগড়ার পর মাতাল অবস্থায় সে মায়ের উপর হামলা চালায়। গুরুতর আহত নারাসাম্মাকে কাকিনাডার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।” (অনূদিত)

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ডেকান ক্রোনিকল’ এর ওয়েবসাইটে ‘Son Stabs Mother To Death In Property Dispute’ শিরোনামে গত ১১ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “এলুরু জেলার কয়্যালাগুডেমে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে ছেলে জাক্কু শিবা (৩০) তার মা জাক্কু নারাসাম্মা (৫০)-কে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। সোমবার (১১ আগস্ট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখানে জিজিএইচ হাসপাতালে নারাসাম্মার মৃত্যু হয়। কয়্যালাগুডেম পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে স্বামীকে হারানো নারাসাম্মার এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। দু’জনেই বিবাহিত এবং আলাদা গ্রামে বসবাস করেন। ছেলে শিবা তার পরিবার নিয়ে পূর্ব গোদাবরী জেলার গোপালপুরম মন্ডলের করাগাপাডু গ্রামে থাকেন।

কয়্যালাগুডেম গ্রামে রাস্তার ধারে সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন নারাসাম্মা। তার দুটি জমি ও দুটি করে ভবন ছিল। এর মধ্যে একটি ভবন ছেলে শিভাকে দিয়ে দেন, যা শিভা পরে অন্যদের কাছে ভাড়া দেন। অপর ভবনে থাকতেন নারাসাম্মা নিজে। শিভা দীর্ঘদিন ধরে মায়ের উপর চাপ দিচ্ছিলেন যেন তিনি ওই বাড়িটিও তাকে দিয়ে দেন, কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। এর আগে একবার শিভা মায়ের উপর হামলা চালিয়ে তার হাত ভেঙে দেয়। তবে ছেলেকে ক্ষতি না করার জন্য নারাসাম্মা সেই মামলাটি তুলে নেন। শনিবার (৯ আগস্ট) শিভা কয়্যালাগুডেমে এসে মাকে নিজের বাড়িতে আসতে বলেন। তিনি রাস্তার ধারে সবজি রেখে বাড়ির পথে হাঁটছিলেন, এমন সময় শিভা আরেকজনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে পিছন থেকে এসে তাকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে। (অনূদিত)

এ বিষয়ে ভারতীয় আরো একাধিক গণমাধ্যম সূত্রেও একইরকম তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১০ আগস্টে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে নিজের মায়ের ওপর ছেলের হামলার দৃশ্যকে সম্প্রতি কক্সবাজারে প্রকাশ‍্যে রাস্তায় সন্ত্রাসীদের কুপিয়ে মানুষ হত্যা করার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img