সম্প্রতি, “চুন্নু ও জিএম কাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও ভাঙচুর” শীর্ষক শিরোনাম এবং “চুন্নু ও জিএম কাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার হঠাৎ পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিএম কাদের” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দল থেকে বহিষ্কারের দাবিটি সঠিক নয় এবং জি এম কাদের গ্রেফতার হননি বরং গত ১০ জানুয়ারি জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগের দাবিতে বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের একটি ভিডিওকে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওর কোথাও জি এম কাদের ও চুন্নুর দল থেকে বহিষ্কার কিংবা জি এম কাদেরের গ্রেফতারের কোনো দৃশ্য বা তথ্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে দাবিটি প্রসঙ্গে চ্যানেলটির উপস্থাপক বলেন, “দর্শক জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার এবং জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও করে ব্যাপক হামলা এবং ভাঙচুর করেছে নেতাকর্মীরা। কেন? চলুন আমরা বিস্তারিত দেখি ভিডিওতে..।”
সংবাদ পাঠ অংশে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে যুক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কালবেলার ফেসবুক পেজে গত ১০ জানুয়ারি “Live: জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের বি ক্ষো ভ..” শীর্ষক শিরোনামে একই ভিডিওর ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে গত ১০ জানুয়ারি “জি এম কাদের ও চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে বনানীতে বিক্ষোভ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে থাকা স্থিরচিত্রর সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অদক্ষতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাই নির্বাচনে ভরাডুবির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জি এম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে বনানী কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা।
উক্ত ঘটনার ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া, গত ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর – ৩ আসনে জয়ী জি এম কাদের গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে শপথ নিতে যান৷ অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওতে জি এম কাদেরের গ্রেফতারের দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১১ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের ফল ঘোষণার ৩ দিন পর জি এম কাদেরের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অদক্ষতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাই নির্বাচনে ভরাডুবির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জি এম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে গত ১০ জানুয়ারি বনানী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওকে “চুন্নু ও জিএম কাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার হঠাৎ পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিএম কাদের” শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর দল থেকে বহিষ্কার ও জি এম কাদেরের গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Kalbela : Live: জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের বি ক্ষো ভ..
- Kaler Kantho : জি এম কাদের ও চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে বনানীতে বিক্ষোভ
- Prothom Alo : সংসদে বিরোধী দলে থাকতে চাই: জি এম কাদের