ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ০৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম জি২৪ ঘণ্টা গত ০৭ আগস্ট ‘জেএমবি-হুজি-সহ একঝাঁক জঙ্গি সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, ‘জেএমবি, হুজির মতো সংগঠন ভারতে কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। সেই হুজি, জেএমবি, আনসারুল বাংলা, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ, শাহদত-ই-আল হিকমা, হিজবুত তাহিরি-সহ একাধিক নিষিদ্ধ সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলি নিল বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।’
দাবি করা হয়, ‘বুধবার ওই নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরপরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওইসব সংগঠন। এদিন সকালে ছাত্র ও জনতাকে স্বাগত জানিয়েছে হিজবুত তাহরির সদস্যরা। তারা বাংলাদেশের সংসদের সমানে মানব বন্ধন করে। সকালে ঢাকার মানিকমিয়া এভিনিউতে সংগঠনের ব্যানার হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন তারা। খিলাফত স্লোগানে কমলা রঙের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে সংসদ ভবনের সামনে হাজির হন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।’
এছাড়াও, দাবি করা হয়, ‘মঙ্গলবার সেনাপ্রধানের নির্দেশের পরই তাদের ছেড়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই জইশের ১২ জন, লস্কর ই তৈবার ৪ জন, হিজবুত তাওহিদের ১৫ জন, আনসারুল বাংলা টিমের ১৮ আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের ৪ জন, আল হিকমার ১২ জন, জেএমবির ২৮ জন, হুজির ২২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
এছাড়াও আরো দুই ভারতীয় গণমাধ্যম ‘Ei Muhurte’ ও ‘BAARTA TODAY’ একই দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে।
জি২৪ ঘণ্টা এর প্রতিবেদন দেখুন- এখানে।
Ei Muhurte এর প্রতিবেদন দেখুন- এখানে।
BAARTA TODAY এর প্রতিবেদন দেখুন- এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে বেশ কিছু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে দাবিতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে হিজবুত তাহরীরসহ একাধিক নিষিদ্ধ সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে জননিরাপত্তা বিভাগ-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসােট পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেএমবি-হুজি-সহ একঝাঁক জঙ্গি সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবিতে দেশিয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, হিজবুত তাহরীরকে বাংলাদেশের সংসদের সামনে মানববন্ধন এবং সকালে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে সংগঠনের ব্যানার হাতে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিবিসি নিউজ বাংলা’র ওয়েবসাইটে ০৭ আগস্ট ‘সরাসরি কভারেজ’ এ প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন করতে দেখা গেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে। বুধবার সকালে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে সংগঠনের ব্যানার হাতে অবস্থান নেয় তারা। বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা ঘটনাস্থলে দেখতে পান, খিলাফত স্লোগানে কমলা রঙের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে সংসদ ভবনের সামনে অবস্থান নেয় হিযবুত তাহরীরের কিছু কর্মী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পরই তাদের সেখান থেকে সরে যেতে দেখা যায়।’
অর্থাৎ, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন এবং ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে সংগঠনের ব্যানার হাতে অবস্থান নেওয়ার দাবি সত্য। কিন্তু হিযবুত তাহরীরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, সেনাপ্রধানের নির্দেশের পরই জইশের ১২ জন, লস্কর ই তৈবার ৪ জন, হিজবুত তাওহিদের ১৫ জন, আনসারুল বাংলা টিমের ১৮ আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের ৪ জন, আল হিকমার ১২ জন, জেএমবির ২৮ জন, হুজির ২২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দাবির বিষয়ে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বাংলাদেশে বেশ কিছু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে দাবিতে ভারতের সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- বিবিসি বাংলা: সংসদ ভবনের সামনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের মানববন্ধন
- Rumor Scanner’s Own Analysis