জামায়াতের আমিরের ব্যবহৃত হেলিকপ্টারটি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন নয় 

সম্প্রতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছেন দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের ব্যবহৃত হেলিকপ্টারটি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন নয় বরং এটি প্রবাসীর হেলিকপ্টার লিমিটেড এর হেলিকপ্টার।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছবিতে হেলিকপ্টারের পেছনের দেয়ালে বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ’র সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় এই সাইনবোর্ডের কারণেই উক্ত দাবিতে ছবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে প্রবাসীর হেলিকপ্টার এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ০১ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের বিস্তারিত অংশে প্রবাসীর হেলিকপ্টার নিয়ে জামায়াত ইসলামীর আমির দিনাজপুরে ০৮ জন শহীদের পরিবারের সাথে দেখা করতে যাওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও, পোস্টে সংযুক্ত ছবিতে প্রবাসীর হেলিকপ্টার এর পক্ষ থেকে জামায়াত ইসলামীর আমিরকে ফুল দিয়ে বরণ করার দৃশ্য দেখা যায়। পোস্টের কোথাও বসুন্ধরা গ্রুপের কথা উল্লেখ করা হয়নি। 

পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র ওয়েবসাইটে গত ০৩ আগস্ট ‘জামায়াত আমিরের বসুন্ধরার হেলিকপ্টার ব্যবহারের তথ্য ভুয়া’ শিরোনামে একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদের বরাতে জানা যায়, জামায়াত ইসলামীর আমির বিভিন্ন সময়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতসহ দলীয় বিভিন্ন কাজকর্মে প্রবাসীর হেলিকপ্টার এর সেবা নিয়েছেন। এছাড়াও, জামায়াতের আমির সর্বশেষ হেলিকপ্টার সেবা নেওয়ার ভাড়া বাবদ দুইপক্ষের কাছে রশিদও সংরক্ষিত আছে বলে দাবি করে প্রবাসীর হেলিকপ্টার কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে কালবেলা’র অনলাইন সম্পাদক পলাশ মাহমুদ এর একটি ফেসবুক পোস্টে জামায়াত ইসলামীর আমিরের ভ্রমণের টিকেট, ছবি ও ভিডিওর সংযুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

গত ০৩ সেপ্টেম্বর প্রবাসীর হেলিকপ্টার লিমিটেড এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বায়জিদ আল-হাসান এর নাম সংবলিত ‘মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণার প্রতিবাদ’ শীর্ষক একটি পোস্ট করা হয়।

এবিষয়ে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রবাসীর হেলিকপ্টার লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বায়জিদ আল-হাসান এর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয় বলে রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেন। এছাড়াও, তিনি বলেন বিমানবন্দরের ঐ স্থানে বেশ কয়েকটি কোম্পানির সাইনবোর্ড ঝুলানো ছিল। এরমধ্যে কাকতালীয়ভাবে প্রচারিত ছবিটি বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ এর সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা হয়। উক্ত সূত্র থেকেই প্রচারিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।

Screenshot collage: Rumor Scanner

এছাড়া, ‘প্রবাসী হেলিকপ্টার লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ০২ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে বিমানবন্দরে হেলিকপ্টারটির অবস্থানের আশেপাশে বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ ছাড়াও মেঘনা এভিয়েশন লিমিটেড ও বিআরবি এয়ার এর সাইনবোর্ড শনাক্ত করা যায়। 

সুতরাং, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ভ্রমণের প্রাক্কালে প্রবাসীর হেলিকপ্টার লিমিটেড এর হেলিকপ্টার এর সাথে ছবি তোলার দৃশ্যকে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img