হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার দাবিটি সত্য নয়

সম্প্রতি, “এইমাত্র হামাসের দখলে ইসরায়েলের পরমানু কেন্দ্র” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

পরমাণুকেন্দ্র দখল

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে সম্ভাব্য সর্বপ্রথম প্রচারিত ভিডিওটি International News 24 নামের ফেসবুক পেইজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে বলা হচ্ছে, ‘ইসরায়েলের পরমাণু কেন্দ্র ঘেরাও করার পরিকল্পনা করেছে হামাস। জলে,  International News 24স্থলে, আকাশে- সব পথেই ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এখন এরই সাথে নতুন করে যোগ হচ্ছে ইসরাইলের পরমানু কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করেছেন যেকোনো মুহুর্তে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রে ঢুকে যেতে পারে হামাসের যোদ্ধারা। হামাসের যোদ্ধাদের এখন যে পরিমান শক্তি রয়েছে, সেই শক্তি দিয়ে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রে ঢুকে যাওয়া হামাসের আর কিছুই নয়। যেভাবে ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হামাস ধোকা দিয়েছে, এতে পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ধোকা দেওয়া হামাসের কাছে কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র। আপনারা যদি হামাসের সমর্থক থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের ভিডিওটি শেয়ার করে দিন।’

অর্থাৎ, ভিডিওর শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার কথা থাকলেও ভেতরে হামাস, ইসরায়েলের পরমাণু কেন্দ্র ঘেরাও করার পরিকল্পনা করার কথা বলা হচ্ছে।

এছাড়া, হামাস ইসরায়েলের পরমাণু কেন্দ্র দখল করেছে এমন দাবিতে ইসরায়েলি এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে Nuclear Threat Initiative এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইসরায়েলের তিনটি পরমাণু বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলো হচ্ছে:

  • ইসরায়েল এটোমিক এনার্জি কমিশন। এটি ইসরায়েলের ডিমোনা (নেগেভ মরুভূমি) এবং ইয়াভনে অবস্থিত।
  • সোরেক নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার। এটি ইসরায়েলের ইয়াভনেতে অবস্থিত।
  • তিরোশ। এটি ইসরায়েলের পরমাণু বিষয়ক সংরক্ষণাগার যা টেল নফ এয়ার বেসের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

ফ্রান্স ভিত্তিক সংবাদ মধ্যেম ‘Le Monde’ এর ওয়েবসাইটে গত ৯ অক্টোবর “One map to understand how Hamas attacked Israel” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Le Monde

প্রতিবেদন থেকে হামাসের ইসরায়েলে হামলা করার জায়গা গুলো সম্পর্কে জানা যায়। তবে সেখানে ইসরায়েলের তিনটি পরমাণু বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের একটিতেও হামলা না হওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র হামলা বা দখল হয়নি।

মূলত, সম্প্রতি হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল হওয়ার দাবিতে ফেসবুকে একাধিক ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইসরায়েলের পরমাণু বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গুলো এখনো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং সুরক্ষিত আছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের পরমাণুকেন্দ্র দখল করার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img