সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং সিইসির পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার গুজব

গত ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ও ফলাফলকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফলাফল বাতিল পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো সিএসসি” শীর্ষক থাম্বনেইল ও প্রায় সমজাতীয় শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

নির্বাচনের ফলাফল বাতিল

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ৩৭ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ১ হাজার ৩ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাইকোর্ট কর্তৃক নির্বাচনী ফলাফল বাতিলের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি এবং পুনরায় নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা দেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বরং গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা -৪ আসনের ভোটের ফলাফল হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিতাদেশের বিষয়টিকে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফুয়াদের একটি ভিডিও দেখানো হয়। তবে পুরো ভিডিওর কোথাও হাইকোর্ট কর্তৃক ফলাফল বাতিল কিংবা সিইসির নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা দৃশ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১ ও ০২ 

অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত প্রথম দুটি ভিডিও ক্লিপই গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা- ৪ আসনের নির্বাচনের ফলাফল স্থগিতের বিষয়ে এনটিভি ও একুশে টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন (,) থেকে নেওয়া৷ 

Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 

উল্লেখিত প্রতিবেদন গুলোতে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের মারধর, কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ ভোটে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ঢাকা-৪ আসনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই  ০৩ 

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ৩য় ভিডিও ক্লিপটির অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১০ জুন “খুলনা বিভাগের ১১৯ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওর একটি অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনে ওই সময় করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক খুলনা বিভাগের ১১৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে বলা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই ০৪ 

আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত সর্বশেষ ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বার্তা বাজার নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ জানুয়ারি “বাংলাদেশে সেংশন কবে আসবে জানালেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর একটি অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওতে ব্যারিস্টার ফুয়াদকে সরকার ব্যাবস্থা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, এই ভিডিওগুলোর  সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল কিংবা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পুনরায় নির্বাচন ঘোষণার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে ঢাকা- ৪ আসনে পোলিং এজেন্টদের মারধর, কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ ভোটে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ওই আসনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে সংবাদসহ ভিডিও প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। উক্ত ঘটনার দুইটি প্রতিবেদনসহ একাধিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে তাতে “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফলাফল বাতিল পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো সিএসসি” শীর্ষক থাম্বনেইলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে আলোচিত দাবিগুলো ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২২টি আসনে জয়ী হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র পদে মোট ৬২ টি আসনে জয়লাভ করেন প্রার্থীরা।

সুতরাং, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং ইসি পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img