জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ৪০০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের কোনো তথ্য দেয়নি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন 

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে গত বছরের ১৬ আগস্ট প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (ইউএনএইচআরসি) এবং এ নিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত প্রায় ৬৫০ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক নিহত ৩৫০-৪০০ জন।’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত প্রায় ৬৫০ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৫০-৪০০ জন থাকার দাবিটি সঠিক নয় বরং প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৬ জুলাই থেকে ০৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনকে হত্যার কথা উল্লেখ রয়েছে  এবং বেশিরভাগ মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত ছাত্র সংগঠন দায়ী বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট প্রকাশিত বাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন সম্পর্কিত আলোচিত তথ্যানুসন্ধানের প্রাথমিক প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের 3a. Unnecessary and Disproportionate Use of Force and Extrajudicial Killings (অপ্রয়োজনীয় এবং অসংগতিপূর্ণ বলপ্রয়োগ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) অনুযায়ী, গণমাধ্যম এবং প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যেখানে ৫ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া বিক্ষোভের ফলে প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

Screenshot: Website 

একই অনুচ্ছেদের ভিন্ন একটি প্যারাতে বলা হয়, বেশিরভাগ মৃত্যু ও হতাহতের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত ছাত্র সংগঠন দায়ী। এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বিক্ষোভকারীদের উপর তাজা গুলি এবং অন্যান্য বল প্রয়োগের ফলে – যারা সশস্ত্র ছিল না বলে জানা গেছে, অথবা কেবল হালকাভাবে সশস্ত্র ছিল, এবং নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বেআইনিভাবে কোনও হুমকি না থাকা বিক্ষোভকারীদের, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের এবং পথচারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের ফলে – যার মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন সাংবাদিক এবং কমপক্ষে ৩২ জন শিশু রয়েছে – আরও অনেক আহত এবং আটক – যাদের মধ্যে বেশিরভাগকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।

এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম New Age -এর ওয়েবসাইটে গত বছরের ১৬ আগস্ট ‘Around 650 killed from July 16 to Aug 11 in Bangladesh, UN says’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

পরবর্তীতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) ওয়েবসাইটে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন সম্পর্কিত চুড়ান্ত তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত প্রায় ৬৫০ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৫০-৪০০ জন থাকার দাবিটি মিথ্যা৷ 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img