ভারতে হাইকোর্ট কর্তৃক নামাজ নিষিদ্ধের দাবিটি গুজব

শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভারতের হাইকোর্ট নোটিশ জারি করে ভারতে নামাজ আদায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন  এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ৩ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের হাইকোর্ট নোটিশ জারি করে ভারতে নামাজ আদায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও ভারতে নামাজ আদায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, নানা সময়ে ভারতের নানা এলাকায় ক্ষেত্রবিশেষে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ করার বা বাধা দেওয়ার সপক্ষে সংবাদ পাওয়া যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির ওয়েবসাইটে “Gurgaon Cancels Namaz At 8 Sanctioned Locations, Says Locals Object” শীর্ষক শিরোনামে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের গুরগাঁও শহরের ৩৭ টি মনোনীত স্থানে আগে নামাজ আদায় করা হতো। তার মধ্যে ৮ টি স্থানে নামাজ আদায় করার অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়েছিল তথা উক্ত ৮টি স্থানে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মূলত এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, অন্যান্য যেসব স্থানে নিষেধাজ্ঞা নেই সেসব স্থানে নামাজ আদায় করা যাবে। তথা, নামাজ আদায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি।

এছাড়া, বার্তা সংস্থা রয়টার্সে ২০২২ সালে “India’s top court revokes ban on large prayer gatherings in mosque” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তর ভারতের শহর ভারানসির স্থানীয় একটি আদালত জ্ঞানভাপী মসজিদে নামাজে বৃহৎ জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। যদিও পরেরদিন নিষেধাজ্ঞাটি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট তুলে নেয়।

তার আগে ২০১৯ সালে ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ এ প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে ভারতের আলীগড়ে রাস্তায় নামাজ বা ধর্মীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মূলত জামে মসজিদ বা ঈদগাহ এ জায়গা সংকুলান না হলে মানুষজন রাস্তায় নামাজ আদায় করতো। তবে, পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে।

এছাড়াও, নানা সময়ে ভারতের নানা মসজিদ বা ধর্মীয় স্থানে নামাজ আদায়ে বাধা আসার সপক্ষে সংবাদ পাওয়া যায়৷ তবে, কোথাও ভারতীয় হাইকোর্ট কর্তৃক ভারতে নামাজ আদায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে সংযুক্ত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে ভিডিওটির উৎস বা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মূলত টিকটকে ভাইরাল একটি অডিও একটি ভিডিও ফুটেজে সংযুক্ত করে উল্লিখিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

সুতরাং, ভারতের হাইকোর্ট নোটিশ জারি করে নামাজ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img