গত ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনকে ঘিরে আজ ১১ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করলো স্টেট ডিপার্টমেন্ট, পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১০ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৪ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
পরবর্তীতে এই ভিডিওটি আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Sabai Sikhi চ্যানেল থেকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি’র লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিটি সঠিক নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘে কর্তৃক পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণাও দেওয়া হয়নি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো দুটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও উক্ত দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই ০১
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ১ম ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘এনটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০৬ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র মিল পাওয়া যায়।
সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার লক্ষ্যে আমরা অনড় অবস্থানেই আছি। এই দায়বদ্ধতা থেকেই সম্প্রতি পররাষ্ট্র দপ্তর ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধাদানকারীদের ভিসা দেয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।’
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ০২
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ২য় ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০৮ নভেম্বর ‘বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত নির্বাচন দেখতে চায় জাতিসংঘ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র একটি অংশের মিল পাওয়া যায়।
সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ডুজারিক বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, দেশটিতে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংস্থার অবস্থান খুব স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি আমরা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে কোনও হয়রানি, নির্বিচার গ্রেপ্তার বা সহিংসতা দেখতে চাই না। এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছি আমরা।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল কিংবা যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ কর্তৃক পুনরায় নির্বাচন ঘোষণার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তবে, বাংলাদেশে ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় দুইদিন পর দেশ দু’টি এ নিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।
তাছাড়া, গত ০৯ জানুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাপ্রধানের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোতো নিনো জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে যা ঘটছে, তার প্রতি নজর রাখছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
এছাড়াও, টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। আজ ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে এই শুভেচ্ছা জানান তিনি।
মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ সহ অন্যান্য প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার তৎপরতা দেখা গেছে। এরই প্রেক্ষিতে আজ ১১ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করলো স্টেট ডিপার্টমেন্ট, পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো দু’টি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২২টি আসনে জয়ী হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র পদে মোট ৬২ টি আসনে জয়লাভ করেন প্রার্থীরা।
সুতরাং, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ কর্তৃক পুনরায় নির্বাচন ঘোষণার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- NTV: বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
- Somoy TV: বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত নির্বাচন দেখতে চায় জাতিসংঘ
- BBC Bangla: বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা যা বলছে
- Amader Somoy: টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে পিটার হাসের শুভেচ্ছা
- Rumor Scanner’s Own Analysis