বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫০ জন নিহত হননি

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে ‘বেইলি রোডে আগুন লাগিয়ে ১৫০ জনকে হত্যা করেছে আ.লীগ, র‍্যাবের হাতে ধরা পরলো শামীম ওসমান’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

বেইলি রোডের

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এ বিষয়ে ইউটিউবে সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি প্রায় ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৫ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতায় ১৫০ জন নিহত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় এবং উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও র‍্যাবের হাতে আটক হননি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন বিষয়ের ভিডিও যুক্ত করে তাতে উক্ত দাবি সম্বলিত থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগ কর্তৃক ১৫০ জনকে হত্যার দাবির পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এছাড়াও ভিডিওটিতে শামীম ওসমানের উক্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা কিংবা র‍্যাবের হাতে আটকের বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ কিংবা এসম্পর্কিত কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি।

ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে উল্লেখিত উক্ত দাবিগুলো যাচাইয়ে ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ০২ মার্চ ‘বেইলি রোডে আগুন: গ্রেপ্তার আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ব্যবস্থাপক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটিতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলা উল্লেখ থাকলেও সেখানে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা বা শামীম ওসমানের র‍্যাবের হাতে আটক হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

পরবর্তীতে ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Zahed’s Take নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ০১ মার্চ ‘বেইলি রোডে ৪৪ মানুষ মরেছে স্বৈরাচারের আগুনে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটিতে জাহেদ উর রহমান নামের একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন।

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র একটি অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত ভিডিও ফুটেজগুলোর সাথে আলোচিত দাবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যার গুজব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সহ একাধিক সূত্রের বরাতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে গত ০২ মার্চ একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। জানা যায়, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে আর কোনো ব্যক্তির নিহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ পর্যন্ত উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা কিংবা উক্ত ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের র‍্যাবের হাতে আটক হওয়ার দাবির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ ২৪’র ওয়েবসাইটে গত ০২ মার্চ ‘বেইলি রোডে আগুন: গ্রেপ্তার ৪ জন দুই দিনের রিমান্ডে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে দুই দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন-ভবনটির নিচতলায় থাকা চা-কফির দোকান চুমুক রেস্তোরাঁর দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন, কাচ্চি ভাই এর বেইলি রোড শাখার ব্যবস্থাপক জয়নুদ্দিন জিসান ও গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে উল্লিখিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।

মূলত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে ‘বেইলি রোডে আগুন লাগিয়ে ১৫০ জনকে হত্যা করেছে আ.লীগ, র‍্যাবের হাতে ধরা পরলো শামীম ওসমান’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন বিষয়ের ভিডিও যুক্ত করে তাতে উক্ত দাবি সম্বলিত থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার (৪ মার্চ) বিচারপতি নাইমা হায়দার নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। 

সুতরাং, রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতায় ১৫০ জন নিহত এবং উক্ত ঘটনার র‍্যাবের হাতে শামীম ওসমান আটক হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ন মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img