সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে “কবরের আযাব কত ভয়ংকর দেখেন এই কবরে হে আল্লাহ আপনি আমাদের কবরের আজাব থেকে হেফাজত করিয়েন | জানি ইসলামিক ভিডিও ভাই রাল হইনা” দাবিতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়।
টিকটকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি এক লক্ষ ষোলো হাজার বারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে। তিন হাজার পাঁচশত এরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কবরস্থানে আযাবের ঘটনা দাবিতে প্রচারিত আগুন ও ধোঁয়ার দৃশ্য কোনো কবরের আযাবের আগুনের দৃশ্য নয়। বরং, কবরস্থানে ঝরে পড়া গাছের পাতাগুলো পরিষ্কার করার জন্যে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় জড়ো করে আগুন লাগানো হয়েছে, সেই দৃশ্য কবরের আযাব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতি বিষয়ক জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর Salahuddin Sumon নামের একজন ভ্লগারের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১২ মার্চ তারিখে “প্রাচীন আমলের একেকটি কবর যেনো একেকটি জীবন্ত ইতিহাস || Ancient Graveyard in Dhaka || Episode 02” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওয়ের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রচারিত ভিডিওটির সাথে Salahuddin Sumon এর ভিডিওটির শুরুর অংশের হুবহু মিল দেখতে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে Salahuddin Sumon এর উক্ত ইউটিউব ভিডিওটির ডেসক্রিপশন এবং ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ভিডিওটিতে তিনি ঢাকার প্রাচীনতম ঐতিহাসিক একটি খ্রিষ্টীয় কবরস্থান দেখান এবং সেটির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন। Salahuddin Sumon এর বক্তব্য অনুসারে, তার গত পর্বে দেখানো কলম্বো সাহেবের রহস্যঘেরা কবরের পাশেই নাকি একটি গির্জা ছিল। আর সেই গির্জাকে ঘিরেই মূলত গড়ে ওঠে এই সমাধিক্ষেত্র। বর্তমানে সেই গির্জার কোনো চিহ্নও নেই। ঢাকার ইতিহাস ৪শ’ বছরের। এই সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাসও ৪শ বছরের। সেই হিসেবে ঢাকার উত্থানপতনের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এই কবরস্থানটি।
অতঃপর, আগুন এবং কবরের আযাবের দাবির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে ভিডিওটির ক্রিয়েটর সালাহউদ্দিন সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। রিউমর স্ক্যানারকে তিনি জানান, “ঝরে পড়া গাছের পাতাগুলো পরিস্কার করার জন্যে সেগুলো বিভিন্ন জায়গা জড়ো করে আগুন লাগানো হয়। ভিডিওটিতে সেই ঘটনা-ই দেখা যাচ্ছে; কোনো কবরের আযাব নয়।”
মূলত, ঢাকার একটি খ্রিষ্টীয় কবরস্থান নিয়ে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতি বিষয়ক জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর Salahuddin Sumon সেটির ইতিহাস আলোচনা করে তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেই ভিডিওটিতে কবরস্থানে ঝরে পড়া গাছের পাতাগুলো পরিস্কার করার জন্যে পাতাগুলো বিভিন্ন জায়গায় জড়ো করে লাগানো আগুন ও ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়৷ উক্ত আগুন ও ধোঁয়াকেই কবরের আযাব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থাৎ, কবরের আযাবের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Salahuddin Sumon – প্রাচীন আমলের একেকটি কবর যেনো একেকটি জীবন্ত ইতিহাস || Ancient Graveyard in Dhaka || Episode 02
- Salahuddin Sumon’s Statement
- Rumor Scanner’s own analysis