সম্প্রতি, ‘দেশে জরুরী অবস্থা জারি,মাঠে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে। ভিডিওটির আর্কাইভ ভার্সন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির সভা, সমাবেশ প্রতিরোধে কোনো প্রকার জরুরী অবস্থা জারি এবং সেনাবাহিনীর মাঠে নামা নিয়ে কোনো প্রকার ঘটনা ঘটেনি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গত ১ আগস্ট Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং একজন সেনা কর্মকর্তার ছবি থাম্বনেইলে ব্যবহার করে ‘ হাসিনার লালবতি! দেশে জরুরী অবস্থা জারি, মাঠে সেনাবাহিনী | Caretaker government | তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ শীর্ষক শিরোনামে ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ভিডিওতে থাকা বিষয়বস্তুর সাথে থাম্বনেইলের কোনো প্রকার মিল পাওয়া যায়নি। উক্ত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপের সাথে নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পুরোনো কিছু ছবি দেখা যায়।
১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটির পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর কিছু ছবি যুক্ত করে বলা হয়,’এবার বিএনপির সমাবেশ ও সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরী অবস্থার ঘোষণা দিলেন আওয়ামী লীগ সরকার। জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির অবনতি হলে যেকোনো সময় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হবে, এর ফলে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।এর ফলে সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

পাশাপাশি ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড ‘ এরশাদ বি-রো-ধী-আ-ন্দো-লনের চেয়েও বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে : ড. আসিফ নজরুল| Daily Manabzamin ‘ শীর্ষক শিরোনামে গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের দৈনিক মানবজমিনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকে নেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে সাম্প্রতিক দাবি এবং প্রকৃত তথ্যের পাশাপাশি তুলনা দেখুন:

তাছাড়া, ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি।
পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির জন্য কোনো জরুরী অবস্থা জারি সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির সভা, সমাবেশ প্রতিরোধে হঠাৎ করেই দেশে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো জরুরী অবস্থা জারির ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির সভা, সমাবেশ প্রতিরোধে হঠাৎ করেই দেশে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Manabzamin : এরশাদ বি-রো-ধী-আ-ন্দো-লনের চেয়েও বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে : ড. আসিফ নজরুল| Daily Manabzamin
- Election Commission Official Website: http://www.ecs.gov.bd/
- Rumor Scanner Own Analysis