ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফার শরণার্থী ক্যাম্পে গত ২৬ মে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪৫ জন মারা গেছেন, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর প্রেক্ষিতে গত ২৯ মে থেকে সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামের সাবেক ইমাম ও খতিব শায়খ ইয়াসির আদ দৌসারির মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, জনাব দৌসারি বলেছেন, “আজ রাফায় আজান হলো না কেন? হয়তো আর কোন মসজিদ বাকি নেই অথবা মুয়াজ্জিনগন বেঁচে নেই।”
উক্ত দাবি সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনের রাফাতে আজান না হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইয়াসির আদ দৌসারি বরং তার নামে চালু থাকা একটি ফেসবুক ফ্যানপেজের পোস্টকে তারই মন্তব্য ভেবে নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। তাছাড়া, রাফায় মসজিদে আজান বন্ধ হয়নি বলে স্থানীয়দের বরাতে জেনেছে রিউমর স্ক্যানার।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সূত্রের খোঁজ করতে গিয়ে ফেসবুকে শায়খ ইয়াসির আদ দৌসারির নামে চালু থাকা একটি ভেরিফাইড পেজের সন্ধান পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এই পেজেই গত ২৯ মে বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টা ১৮ মিনিটে এ সংক্রান্ত প্রথম পোস্ট করা হয়। আরবিতে দেওয়া পোস্টের বাংলা অনুবাদ করলে যা হয় তা হলো, “আজ রাফাতে নামাজের আজান দিলেন না কেন? হয়তো মসজিদ বাকি নেই, হয়তো অনুমতিও নেই!! ”।
Screenshot: Facebook
মূলত এরপরই আলোচিত দাবিটি ব্যাপকভাবে প্রচার হতে শুরু করে। পেজটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি খোলা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ মে। মিশর থেকে ছয় জন, সৌদি আরব থেকে তিন জন এবং অজ্ঞাত লোকেশনের একজন ব্যক্তি পেজটি পরিচালনার সাথে জড়িত।
পেজটি আসল কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সৌদি আরবের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান নো রিউমারস এর প্রতিষ্ঠাতা রায়ান আদিলের সাথে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, সৌদির দুই পবিত্র মসজিদের প্রখ্যাত ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের অফিশিয়াল কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বা পেজ নেই। এখন যেগুলো দেখছেন এগুলোর সব ভুয়া অ্যাকাউন্ট।
গত ০৪ মে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর একটি সরকারি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টেও একই তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, গ্র্যান্ড মসজিদের ধর্ম বিষয়ক উপ-প্রধান জনাব বদর আল শেখ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দুটি পবিত্র মসজিদের ইমাম এবং মুয়াজ্জিনদের জন্য কোনও অ্যাকাউন্ট নেই বলে নিশ্চিত করেছেন। এও বলেছেন যে এই ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্টগুলোতে যা প্রকাশিত হয় তা সব অবৈধ।
এই পোস্টে বলা হয়, প্রেসিডেন্সি ভুয়া এসব অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তিমূলক আইনি পদক্ষেপ নেবে।
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, শায়খ ইয়াসির আদ দৌসারি রাফার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো মন্তব্য করেননি।
কিন্তু তিনি অন্য কোথাও এমন মন্তব্য করেছেন কিনা তা জানতে গণমাধ্যমে কোনো তথ্য মেলেনি। আরও নিশ্চিত হতে
রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে রায়ান আদিলের কাছে জানতে চেয়েছিল। তিনি জানালেন, জনাব দৌসারি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকেই এই ভুয়া বিবৃতি ছড়িয়েছে।
রাফার মসজিদগুলোতে গত ২৮ মে আজান দেওয়া হয়েছে কিনা তাও আলাদাভাবে জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার। ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, আজান না হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। আজান হচ্ছে, তবে তা নিয়মিত নয়। বেশিরভাগ মসজিদেই কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। কিন্তু রাফার মানুষজন আজান শুনছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুরোধে রিহাম রাফার স্থানীয় কয়েকজনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেও একই তথ্য পেয়েছে।
আহমেদ বাতাহ নামে রাফার এক বাসিন্দা বলছেন, ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে আজান দেওয়া ছাড়া মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা প্রায় নেই বললেই চলে।
অর্থাৎ, স্থানীয়দের বরাতে জানা যাচ্ছে, রাফাতে আজান না হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
মূলত, ফিলিস্তিনের গাজার রাফার শরণার্থী ক্যাম্পে গত ২৬ মে ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রেক্ষিতে গত ২৯ মে থেকে সৌদি আরবের মসজিদুল হারামের সাবেক ইমাম ও খতিব শায়খ ইয়াসির আদ দৌসারির মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, জনাব দৌসারি বলেছেন, “আজ রাফায় আজান হলো না কেন? হয়তো আর কোন মসজিদ বাকি নেই অথবা মুয়াজ্জিনগন বেঁচে নেই।” তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, রাফাতে আজান না হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইয়াসির আদ দৌসারি। প্রকৃতপক্ষে, তার নামে চালু থাকা একটি ফেসবুক ফ্যানপেজের পোস্টকে তারই মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া, রাফার স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে ফিলিস্তিনের একজন ফ্যাক্টচেকার রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, রাফায় মসজিদে আজান না হওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের রাফাতে আজান না হওয়ার দাবিতে মসজিদুল হারামের সাবেক ইমাম ইয়াসির আদ দৌসারি মন্তব্য করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement from Ryan Adil, No Rumors
- رئاسة الشؤون الدينية بالمسجد الحرام والمسجد النبوي: X Post
- Statement from Riham Abu Aita
- Rumor Scanner’s own analysis