কুসিক মেয়র তাহসিন বাহারের ছবি ব্যবহার করে পাত্র চাওয়ার ভুয়া পোস্ট ফেসবুকে

গত ১৮ মার্চ ‘রিয়া ভাবি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের(কুসিক) উপ-নির্বাচনে সদ্য বিজয়ী মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “একজন গরিব ঘরের ছেলেকে বিয়ে করতে চাই। বয়স 40-50 হলেও চলবে।” একই ছবি তিনদিন পর গত ২১ মার্চ ‘প্রবাসী মেয়ে সালমা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকেও প্রচার করা হয় একই ক্যাপশনে। 

এদিকে গত ২৮ মার্চ একই নাম অর্থাৎ ‘প্রবাসী মেয়ে সালমা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে কামাল হোসেন নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে বগুড়ার স্থানীয় সংগীতশিল্পী অন্জনা আক্তারের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “৩৭ বছর বয়সে মহিলার সাথে প্রেম কোন ভাই এরকম একজন ছেলে লাগবে।” 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুসিক মেয়র তাহসিন বাহার এবং বগুড়ার সংগীতশিল্পী অন্জনা পাত্র বা প্রেমিক চেয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়া তাদের ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া দাবিগুলো ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কুসিক মেয়র তাহসিন বাহারের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং পেজে তিনি পাত্র চেয়ে পোস্ট করেছেন শীর্ষক কোনো তথ্য মেলেনি।

তাহসিন বাহারের আলোচিত ছবিটি তার পেজেই খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বিএমএ কুমিল্লা জেলা শাখার সকল সদস্যদের নিয়ে কুমিল্লার মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় উক্ত ছবিটি তোলা হয়৷ 

Screenshot: Facebook 

গত ০৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১ম নারী মেয়র নির্বাচিত হন ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ালেও কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা হিসেবেই কুমিল্লায় বেশ পরিচিত ছিলেন তিনি । মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পরই তার ছবি ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

অন্যদিকে, বগুড়ার স্থানীয় সংগীতশিল্পী অন্জনা আক্তারও প্রেম করার আগ্রহ প্রকাশ করে কোনো পোস্ট দেননি। বরং গত ২৯ মার্চ এ বিষয়ে সতর্ক করে তিনি একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “কিছু খারাপ মানসিক বিকারগ্রস্থ মানুষ আমার ছবি সংগ্রহ করে বিভিন্ন গ্রুপ বা আইডিতে এ সব নোংরা পোষ্ট করতেছে। অন্য কারো বডির সাথে আমার মুখ লাগিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করতেছে। সবাই এমন খারাপ মানসিক বিকারগ্রস্থ মানুষের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকবেন। দেশে আইন আছে , এদের বিরুদ্ধে যথাযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। যাহারা আমার নামে খারাপ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করতেছেন , তাদের বিরুদ্ধে যথাযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিব। প্রয়োজন পড়লে তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।”

Screenshot: Facebook 

যদিও তিনি তার পোস্টে ‘অন্য কারো বডির সাথে আমার মুখ লাগিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করতেছে।’ শীর্ষক দাবি করছেন, তবে আমরা তার প্রোফাইলেই এই ছবিটি খুঁজে পেয়েছি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলশান শুটিং ক্লাবে ছবিটি তোলার কথা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন অন্জনা। 

Screenshot: Facebook

অন্জনা রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দেবেন। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জড়িত না থেকেও তাদের ছবি ব্যবহার করে পাত্র চাওয়া বা বন্ধু হওয়ার আহ্বান জানানোর এই পণ্থা অবশ্য নতুন নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসা বহু পুরোনো “বন্ধু চাই” শিরোনামের এই সংক্রান্ত সবগুলো পাবলিক পোস্ট-ই স্ক্যাম কিংবা প্রতারণামূলক পোস্ট। এসকল পোস্টকে এবং এর সাথে সংযুক্ত ছবির নারীকে পোস্টকারীর ছবি ভেবে সাধারণ ব্যাবহারকারীদের অনেকেই বিভ্রান্ত হওয়ার উদাহরণ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই বিশ্বাসের কারণে আর্থিক কিংবা অন্য কোনো ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায়না। ফলে অনলাইনের এসকল প্রতারণা থেকে বাঁচতে ডিজিটাল মিডিয়া লিটারেসির বিকল্প নেই বলে মনে করে রিউমর স্ক্যানার৷ এ বিষয়ে ২০২৩ সালে প্রকাশিত রিউমর স্ক্যানারের একটি ফ্যাক্টফাইল দেখুন এখানে। 

মূলত, কুসিক মেয়র তাহসিন বাহার এবং বগুড়ার সংগীতশিল্পী অন্জনা আক্তারের ছবি ব্যবহার করে তারা পাত্র ও প্রেমিক চেয়েছেন শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট করা হলেও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা মেলেনি। প্রকৃতপক্ষে, তাহসিন বাহার ও অন্জনার ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে ভুয়া এই দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, কুসিক মেয়র তাহসিন বাহার এবং বগুড়ার সংগীতশিল্পী অন্জনা আক্তার পাত্র ও প্রেমিক চেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img