কার জন্য বন্ধু, কে চায়; কে ফাঁদে পা দেয়?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের পদচারণা খুব বেশি সময়কার আগের নয়। তবুও “ফেসবুক ব্যবহারে সারা পৃথিবীতে দু’নম্বরে ঢাকা” কিংবা “ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে বাংলাদেশ শীর্ষক শিরোনামে বিভিন্ন সময়ে দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা এবং সময়ের বৃদ্ধির অগ্রগতির অবস্থা চোখে পড়ে। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫কোটি ২০লাখ। এই অগ্রযাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কলা-কৌশল জানা ব্যবহারকারী যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে এগুলো না জানা ব্যবহারকারী-ও। একইসাথে মিডিয়া লিটারেসি না থাকা ব্যবহারকারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্ক্যামের ঘটনাও প্রায় শুরুর সময় থেকেই ছিল। কালের বিবর্তনে শুধুমাত্র পদ্ধতি ও প্রয়োগের প্রক্রিয়াতে পরিবর্তন আসলেও উদ্দেশ্যগতভাবে স্ক্যাম এখনও বিদ্যমান। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো বাংলাদেশে ফেসবুকে ব্যাবহারকারীদের পদচারণা বৃদ্ধির শুরুর দিকের একটি স্ক্যাম ও তার আদ্যোপান্ত।

স্ক্যাম কী

Dictionary.com অনুযায়ী একটি স্ক্যাম হল একটি প্রতারণামূলক স্কিম বা কৌশল যা কাউকে কিছু, বিশেষত অর্থ থেকে প্রতারণা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। স্ক্যাম বা কেলেঙ্কারীও একটি ক্রিয়াপদ (ভার্ব) যার অর্থ কারো সাথে প্রতারণা করা।

উদাহরণ: ব্যাংকগুলো কখনই আপনাকে ফোনে আপনার ক্রেডিট কার্ড নম্বর বা সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর জিজ্ঞাসা করবে না। যদি কেউ কল করে এবং এই ধরনের তথ্য জানতে চায়, এটি একটি স্ক্যাম।

Screenshot: dictionary.com

Merriam-webster অনুসারে, স্ক্যাম এর অর্থ হলো প্রতারণা। অর্থাৎ, কারো সাথে প্রতারণা করাকে স্ক্যাম বলে।

এখানে স্ক্যাম এর আরো একটি বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। স্ক্যাম হলো এমন কেলেঙ্কারী বা প্রতারণা দ্বারা কিছু (অর্থ, সম্পদ) লাভ বা ক্ষতি হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, যার সাথে স্ক্যাম করা হয় তার আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অপরদিকে যিনি স্ক্যাম করেন তার আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে।

Screenshot: merriam-webster
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে “বন্ধু চাই” শিরোনামের পোস্ট

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “বন্ধু চাই” শিরোনামে পোস্ট করে এর মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করা হয় সাধারণ ব্যবহারকারীদের। এছাড়াও, এসকল পোস্টের সাথে নিজেদের ছবি দাবিতে (পরোক্ষভাবে) বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশী, ভারতীয় কিংবা বিভিন্ন দেশের ও ইন্ডাস্ট্রির নায়িকাদের ছবি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, ফেসবুক বা ইন্টারনেট থেকে সাধারণ নারীদের ছবি নিয়ে অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করা হয়। ফলে তাদের ক্ষেত্রে মানহানি কিংবা হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়। দেশীয় সংবাদ মাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়েও অনলাইনে অনুমতি ছাড়া নারীর ছবি ব্যবহার বাড়ছে

Screenshot: Dhakatribune

২০১৫ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০১৬ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০১৭ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০১৮ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০১৯ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে

অবাক করা ব্যাপার হলো এই সময়ে এসেও এই বছরের (২০২৩ সালের) জানুয়ারিতে এজাতীয় শিরোনামে করা একটি পোস্ট 139K লাইক, 10K কমেন্ট এবং 1.5K শেয়ার পেয়েছে।

Screenshot: Facebook/Dailybdmovienews

ফেসবুকে বন্ধু চাই শিরোনামের পোস্টের শুরুর বিষয়ে কি জানা যায়

অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিদ্যমান পোস্টের মধ্যে নারীদের ছবি ব্যবহার করে “বন্ধু চাই” শীর্ষক প্রথম শিরোনামের পোস্ট (পাবলিক পোস্ট) পাওয়া যায় ২০১৫ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি। তবে ছবি ব্যতীত শুধু পোস্ট আরো আগে থেকেই ইন্টারনেটে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) বিদ্যমান।

Screenshot: Facebook/Shanta moni

পরবর্তীতে একই বছর আরো কিছু পোস্ট করা হয় এ জাতীয় শিরোনামে। পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাইক (2.1K) পায় এই পোস্টটি।

অভিনেত্রীদের ছবি ব্যবহার করে বন্ধু চাই শিরোনামে প্রচার

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে এসকল স্ক্যামের সাথে সৌন্দর্য্যের মাধ্যমে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে নায়িকাদের ছবিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরকম একটি পোস্টের উদাহরণ দেখুন নিচে।

Screenshot: Facebook/Jesmin Sadia Jahan Prova

এই ছবিটি পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারা যায় যে ছবিটি “তামান্না ভাটিয়া” নামের ভারতীয় একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর। যদিও দাবির পোস্টের ছবিতে এডিট করে রং উজ্বল করে দেওয়া হয়েছে। এই একই পেজ থেকে তামান্না ভাটিয়ার আরো একটা ছবি ব্যবহার করে একই জাতীয় শিরোনামে পোস্ট করে হয়েছিল।

Screenshot from Bing

এছাড়াও, মেয়েদের জগত নামের একটি পেজ থেকে একজন নায়িকার ছবিসহ এই জাতীয় শিরোনামের একটি পোস্ট পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook/Meyeder jogot

এই ছবিটি পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারা যায় যে ছবিটি “মীরা নন্দন” নামের ভারতীয় একজন অভিনেত্রীর (প্রধানত মালায়লাম)। 

Screenshot from Bing 

ব্যবহারকারীরা যেভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন

“বন্ধু চাই” শিরোনামের এজাতীয় পোস্টগুলোতে ছবি কিংবা অন্যান্য তথ্যের ক্ষেত্রে পোস্টকারীদের মিথ্যার আশ্রয় নিতে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই মিথ্যাকে সত্য ভেবে নিলেই বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন বিশ্বাসকারীরা। এই বিভ্রান্তির নমুনা পাওয়া যায় পোস্টগুলোর কমেন্টে। পরবর্তীতে এই বিশ্বাসের কারণে আর্থিক কিংবা অন্য কোনো ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায়না। 

Screenshot: Facebook/ Mussaffa Ebna Rokib

“মুসাফফাহ ইবনে রকিব” নামের এই ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একজন নারীর ছবি ব্যবহার করে “বন্ধু চাই” সহ সংশ্লিষ্ট ক্যাপশনে একটি পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টটির কমেন্টে অনেক মন্তব্যকারীগণ পোস্টটিকে একজন নারী নিজের ছবি সহ বন্ধু পাওয়ার আহবান জানিয়েছেন ভেবে মন্তব্য করেছেন। 

মন্তব্যকারীরা ছবির নারীর সৌন্দর্য্য নিয়ে মন্তব্য করেছেন, আপু বলে সম্বোধন করেছেন, কেউ কেউ নিজের ফোন নম্বরও শেয়ার করেছেন। কিন্তু প্রোফাইলটির নাম একজন ছেলের নামে। অবশ্য অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে পোস্টটি আপ্লোড করার সময়ে তার প্রোফাইলের নাম ছিল “মুন্নি আক্তার”। এছাড়াও প্রোফাইলটির নাম ইতোপূর্বে একবার “জহিরুল ইসলাম”-ও রাখা হয়েছিল।

আলোচিত বিষয়ে এই প্রোফাইল থেকে “ছেলে🆚মেয়ে” নামক ফেসবুক গ্রুপে অন্তত চারজন আলাদা আলাদা নারীর ছবি ব্যবহার করে চারটি পোস্ট করা হয়েছে। 

Screenshot: Facebook/ Group posts of Mussaffa Ebna Rokib

এর মধ্যে বলিউড অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন এর ছবি যুক্ত করেও একটি পোস্ট করা হয়েছে।

Screenshot: nowrunning

কিন্তু পোস্টটিতে ব্যবহারকারীদের মন্তব্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে অধিকাংশ মন্তব্যকারী-ই বুঝতে পারেননি যে ছবিটি পোস্টদাতার নিজের নয়।

Screenshot: Facebook/ Comment of Mussaffa Ebna Rokib’s post

এইরকম প্রতারণার বিষয় নিয়ে ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন (কপি পেস্ট-ও করেছেন) অনেকেই। সমজাতীয় শিরোনামের এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে

Screenshot: Facebook/Sohel Khan

এজাতীয় প্রতারণার সংবাদ গণমাধ্যমে

একজনের প্রোফাইল বা পেজ এ অন্যজনের ছবি (কখনো ভুয়া নাম কিংবা কখনো ছবির সাথে সেই ব্যক্তির নাম) অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করে প্রতারণার সংবাদ বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

Screenshot: Google search page

সাধারণ নামের পেজ তবু বিভ্রান্তি

উপরের উদাহরণগুলোতে অনেকেই পেজ বা প্রোফাইলে মেয়েদের নাম দেখে ঐ নামের সত্যিকারের মেয়ের পেজ বা প্রোফাইল ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এমন উদাহরণও পাওয়া যায় যেখানে মেয়ে নামের পেজ বা প্রোফাইল ব্যতীত সাধারণ নামের প্রোফাইল বা পেজ থকে আপ্লোড করা সমজাতীয় শিরোনামের পোস্ট থেকেও ব্যবহারকারীগণ বিভ্রান্ত হয়েছেন। [ ডিজিটাল মিডিয়া লিটারেসি মূলত এসকল ক্ষেত্রে প্রয়োজন ]

Screenshot: Facebook/Bangla Media

“Bangla Media” নামের একটি পেজ থেকে আপ্লোড করা আলোচিত শিরোনামের একটি পোস্টে বিভ্রান্ত হয়েছেন অনেক ব্যবহারকারী (কমেন্ট পর্যালোচনা করে পাওয়া যায়)। এই পোস্টটি থেকে বিভ্রান্ত হয়ে ব্যবহারকারীদের করা পোস্ট বা বিভ্রান্তির নমুনা পাওয়া যাবে এই লিংকে। 

[শব্দচয়ন সহ বিভিন্ন কারণে কমেন্টের ছবি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পোস্টের আর্কাইভ লিংকে গিয়ে কমেন্ট দেখা যাবে।]

পেজটির ট্রান্সপারেন্সি থেকে জানা যায় পেজটির নাম কখনো পরিবর্তন করা হয়নি। অর্থাৎ, সবসময় এই একই নামেই ছিল। এছাড়াও পেজটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই পেজ থেকে বিভিন্ন নারীদের ছবি ব্যবহার করে এজাতীয় শিরোনামে পোস্ট করা হয়।

Screenshot: Facebook/Bangla Media

একইভাবে “চিত্র বিনোদন” নামের একটি পেজ থেকেও একই জাতীয় পোস্ট করা হয়। পেজ ট্রান্সপারেন্সি অনুযায়ী পোস্টটি আল্পোড করার সময়েও এই পেজের নাম একই ছিল। এই পোস্টেও ব্যবহারকারীদেরকে বিভ্রান্ত হতে দেখা যায় কমেন্টবক্সে।

Screenshot: Facebook/Chitro binodon

“Shodesh 24” নামক একটি নিউজ পোর্টালের পেজেও এরকম দুটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে দেখা যায় পেজটি থেকে এই জাতীয় শিরোনামে বেশকিছু পোস্ট করা হয়েছে (অভিনেত্রী সহ বিভিন্ন নারীদের ছবি ব্যবহার করে)। নিউজের পেজে করা এসব পোস্টেও ব্যবহারকারীদেরকে বিভ্রান্ত হতে দেখা গেছে।

Screenshot: Shodesh24

যদিও পেজটি সেসময়ে “Reshma Begum” নামে ছিল। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর ২০১৮ সালে এটি বর্তমান নামে পরিবর্তন করা হয়। নাম পরিবর্তনের পর থেকে আর এই জাতীয় শিরোনামে পোস্ট করতে দেখা যায়নি। তবে নাম পরিবর্তনের পরও অনেককে কমেন্টে বিভ্রান্ত হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ এইসব ব্যবহারকারীগণ পেজটি “Shodesh 24” নাম থাকা অবস্থায় এর “বন্ধু চাই” শীর্ষক পোস্টে এই কমেন্ট করেছে। 

Screenshot: Shodesh24

এই বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার উপায়

প্রথমত এজাতীয় পোস্টের প্রায় সবগুলোই থাকে প্রতারণামূলক। সে কারণে এজাতীয় পোস্টগুলোকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এছাড়াও এসকল পোস্টের সাথে সংযুক্ত তথ্য ও ছবি যাচাই করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। ছবি যাচাইয়ের এই পদ্ধতিকে বলা হয় “রিভার্স ইমেজ সার্চ” পদ্ধতি।

রিভার্স ইমেজ সার্চ” পদ্ধতিতে ছবির তথ্য যাচাই, হুবহু দেখতে একইরকমের ছবি কিংবা এডিটেড ছবি কিনা তা যাচাই করা যায়। এছাড়াও, কোনো নায়িকাদের ছবি নিজেদের নামে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে যাচাই করা যায়।

Image Source- istockphoto 

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি

তথ্যের মত করে ছবি দিয়েও ছবি সার্চ করা যায়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় “রিভার্স ইমেজ সার্চ”। সার্চ ইঞ্জিনে ছবি দিয়ে সেই ছবির তথ্য খোঁজ করাকেই রিভার্স ইমেজ সার্চ বলা হয়। 

ছবিসংযুক্ত কোনো তথ্য যাচাইয়ে ইমেজ সার্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ইমেজ সার্চের অপশন রয়েছে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় বা বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ইমেজ সার্চ ইঞ্জিন হলোঃ

নিম্নে উল্লিখিত প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে ইমেজ সার্চ করার পদ্ধতি দেখানো হলোঃ

Google Image Search

‘upload a file’ অপশনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন

ফাইন্ড ইমেজ সোর্স এ ক্লিক করুন
সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

Yandex Image Search

https://yandex.eu/images/ সাইটে প্রবেশ করুন

ক্যামেরার লেন্সের মত দেখতে আইকনে ক্লিক করুন

‘Select File’ অপশনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন

সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

Bing Image Search

https://www.bing.com/images/feed সাইটে প্রবেশ করুন

ক্যামেরার লেন্সের মত দেখতে আইকনে ক্লিক করুন
 ‘Browse’ অপশনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন
সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

Tineye

https://tineye.com/ সাইটে প্রবেশ করুন

‘Upload’ অপশনে ক্লিক করে ছবিটি আপ্লোড করুন
সার্চ ফলাফল দেখা যাবে

উপরে দেখানো প্রতিটি স্টেপ ডেস্কটপ থেকে দেখানো হয়েছে। অ্যান্ড্রোয়েড ফোনে ‘Reverse Image Search – Multi’ বা “Revers Image Search Tool” নামের অ্যাপের সাহায্যে Google, Yandex & Bing সার্চ ইঞ্জিনে ইমেজ সার্চ করা যাবে।  

Image Source- istockphoto 

পোস্টদাতা প্রোফাইল বা পেজ যাচাই

এই জাতীয় পোস্টদাতার হ্যান্ডেলটির পূর্বের বিভিন্ন সময়ের পোস্ট স্ক্রল করে করে দেখতে হবে। যদি কেউ তার নিজের ছবি ব্যবহার করে এজাতীয় পোস্ট করে সেক্ষেত্রে হ্যান্ডেলটির বিভিন্ন পোস্টে শুধুমাত্র তার ছবিই ব্যবহার করবে। যদি ভিন্ন ভিন্ন নারীর ছবি ব্যবহার করা হয় তখন এইসকল হ্যান্ডেলকে এড়িয়ে যেতে হবে। কেননা এগুলোর উদ্দেশ্য সৎ হয় না। আর অনুমতি ব্যতিরেকে অন্যের ছবি ব্যবহার করে পোস্ত করাও আইনত ঠিক নয়।

এছাড়াও, এজাতীয় পোস্ট যেসকল প্রোফাইল বা পেজ-এ পাওয়া যাবে সেসকল প্রোফাইল এবং পেজের ট্রান্সপারেন্সি সেকশন থেকে পেজটি কবে খোলা হয়েছিল, কোথা থেকে পরিচালিত হছে কিংবা কয়বার কি কি নাম পরিবর্তন করেছে এসকল তথ্য পাওয়া যাবে।

Screenshot: Facebook/Shodesh24

“See All” এ ক্লিক করলে বাকি ইনফরমেশনগুলোও দেখা যাবে।

Screenshot: Shodesh 24

প্রোফাইলের ক্ষেত্রেও “About” অপশন থেকে “Profile Transparency” থেকে এই তথ্যগুলো দেখা যাবে।

আইন কি বলে

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি এর বাংলা বিভাগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, “ অনুমতি ছাড়া কেউ ছবির বাণিজ্যিক ব্যবহার করলে ছবির যা মূল্য তার তিনগুণ অর্থ দিতে হবে” (কপিরাইট)।

Screenshot: BBC Bangla

অপরদিকে দেশীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর অনলাইন সংস্করণ এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “কপিরাইট দুইভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। একটি আর্থিক এবং অপরটি নৈতিক। দুটি বিষয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদি কেউ বাণিজ্যিকভাবে কোনো ছবি-ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করে তাহলে, এর আর্থিক লঙ্ঘন হয়ে থাকে। আর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য না থাকলে সেটি নৈতিক লঙ্ঘন হয়।

বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কপিরাইট লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ চার বছর সাজা এবং সর্বনিম্ন ছয়মাস কারাদণ্ড। আর সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য না থাকলে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকার কম জরিমানা করবে আদালত।

কপিরাইট অফিস বলছে, শাস্তির বিষয়টি আদালত বাস্তবায়ন করবে। এটি কপিরাইট অফিস করে না”।

এছাড়াও এসকল ছবি ব্যবহার করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারণা করলে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ আইনেও শাস্তির বিধান রয়েছে।

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “বন্ধু চাই” শিরোনামের প্রায় সবগুলো পাবলিক পোস্ট-ই স্ক্যাম কিংবা প্রতারণামূলক পোস্ট। এসকল পোস্টকে এবং এর সাথে সংযুক্ত ছবির নারীকে পোস্টকারীর ছবি ভেবে সাধারণ ব্যাবহারকারীদের অনেকেই বিভ্রান্ত হওয়ার উদাহরণ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই বিশ্বাসের কারণে আর্থিক কিংবা অন্য কোনো ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায়না। ফলে অনলাইনের এসকল প্রতারণা থেকে বাঁচতে ডিজিটাল মিডিয়া লিটারেসির বিকল্প নেই। ডিজিটাল মিডিয়া লিটারেসি’র পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে প্রতারণা বা হয়রানি থেকে বাঁচতে এ সম্পর্কিত আইন কানুন-ও জেনে নেওয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img