বিএসসি-ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্ব ইস্যুতে কালবেলার নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

গত ৩১ আগস্ট থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জনাব মমিন মজিবুল হক সমাজী কে উদ্ধৃত করে ও তার ছবি যুক্ত করে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। 

ফটোকার্ডটিতে বলা হয় ‘পড়াশোনা করেছি বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। বিভিন্ন প্রজেক্টে বুয়েটের ছাত্র এবং শিক্ষকদের সাথে কাজ করেছি। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার সাথে কাজ করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ইঞ্জিনিয়ারিং নলেজ বুয়েটের প্রফেসরদের চেয়েও বেশি। -বিলবন্ধু মমিন মজিবুল হক টুটুল সমাজী | প্রকল্প পরিচালক, এলজিইডি’।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে আর্কাইভ 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংকে জড়িয়ে প্রকৌশলী মমিন মজিবুল হক সমাজীকে উদ্ধৃত করে ও তার ছবি যুক্ত করে কালবেলা কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি এবং মমিন মজিবুল হক সমাজীও এমন কোনো মন্তব্য করেননি। বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালবেলার প্রচলিত ফটোকার্ডের আদলে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালবেলার লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ৩১ আগস্ট, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে কালবেলার ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালবেলার ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, কালবেলার প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

আলোচিত ফটোকার্ডে উল্লিখিত ‘বিলবন্ধু মমিন মজিবুল হক টুটুল সমাজী’ নামক ব্যক্তির বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মমিন মজিবুল হক সমাজীর  ফেসবুক প্রোফাইল ইউটিউব চ্যানেল– দুই জায়গাতেই ‘Momin Mozibul Haque Shamaji (মমিন মজিবুল হক সমাজী)’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (LGED) ওয়েবসাইটেও তার এই নামটিই দেখা যায়। 

অর্থাৎ, আলোচিত ফটোকার্ডে উল্লিখিত ‘বিলবন্ধু মমিন মজিবুল হক টুটুল সমাজী’ নামটি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোথাও ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

পরবর্তীতে, মমিন মজিবুল হক সমাজীর ফেসবুক প্রোফাইলে গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot: Facebook

উক্ত ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, ‘আমি কখনই কোন বক্তব্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করিনি। কাজেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে আমার বক্তব্যকে খন্ডিত বা বিকৃতভাবে উপস্থালন করা হলে তাৎক্ষণিক আমি আপনার বন্ধু হবার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হবার পথ বেছে নেব। আল্লাহ হাফেজ।’।

এছাড়া, গত ০১ সেপ্টেবর তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে প্রচারিত ফেসবুক লাইভ সেশনে তিনি পুণরায় একই কথা জানান। এসময় একটি ট্যাবে আলোচিত ফটোকার্ডটি দেখিয়ে তিনি বলেন, “একটা পেপার কাটিং আপনাদের দেখাতে চাই। এইভাবে একটা নিউজ করা হয়েছে ,হুইচ ইজ ফেক। কেননা, এই ধরনের কোনো কিছুর সাথে আমি যুক্ত ছিলাম না। এবং এই ধরনের কোনো স্টেটমেন্ট দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা। আমি অনুরোধ করব এইভাবে ফলস এ্যান্ড ফ্যাব্রিকেটেড নিউজ কোনো কিছুর নাম না দিয়ে প্রকাশ না করার জন্য। এরপরে যা বা যারা এমন করবেন,তাদের বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা নিতে কিন্তু বাধ্য হব।”

Screenshot: Facebook

কালবেলা ব্যতীত অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷

উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট থেকে বুয়েটসহ কয়েকটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। অন্যদিকে, আইডিইবি ও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে। এই পাল্টাপাল্টি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রকৌশলী মমিন মজিবুল হক সমাজীকে উদ্ধৃত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রচার করা হয়েছে৷ 

সুতরাং, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জনাব মমিন মজিবুল হক সমাজী কে উদ্ধৃত করে বুয়েট-ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইস্যুতে কালবেলার নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img