মির্জা ফখরুলের মন্তব্য দাবিতে যমুনা টিভি ও ডিবিসি নিউজের নামে ভুয়া ও সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত দুইটি ফটোকার্ডে প্রচার করা হয়েছে। একটি ফটোকার্ডে দাবি করা হয়েছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামিলীগ এবং জাতীয় পার্টির সাথে জোট করতে চায় বিএনপি’। অপর ফটোকার্ডে দাবি করা হয়, মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘৭১ এর চেতনা কে বাচিয়ে রাখতে দরকার হলে আওয়ামিলীগ এর সাথে জোট করবো’।

প্রথম ফটোকার্ডসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

দ্বিতীয় ফটোকার্ডসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজের লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, মির্জা ফখরুল বলেছেন “আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা শেষ পর্যায়ে। ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে জামাতকে ঠেকানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন। আমরা এই তিন শক্তি একত্রে জামাতকে প্রতিহত করে দেব।”

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলোচিত তিনটি ফটোকার্ডে উল্লিখিত মন্তব্য করেননি। এছাড়া, যমুনা টিভি ও ডিবিসি নিউজও এরূপ কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যমুনা টিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন অনুকরণ করে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত ভুয়া ফটোকার্ড দুইটি তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে, ডিবিসি নিউজের একটি ফটোকার্ড সম্পাদনা করে ডিবিসি নিউজের লোগো সংবলিত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

যমুনা টিভির ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ড দুইটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডগুলোতে ‘যমুনা টিভি’র লোগো রয়েছে। 

এরই সূত্র ধরে ‘যমুনা টিভি’ এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ‘যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইটেও এরূপ দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের সাথে ‘যমুনা টিভি’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত প্রচলিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের তুলনা করলে ফটোকার্ডে লোগো এবং গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল থাকলেও প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও, কারোর মন্তব্য প্রচার করা হলে যমুনা টিভির ফটোকার্ডে মন্তব্যের নিচে ব্যক্তির নামেরও উল্লেখ থাকে যা আলোচিত ফটোকার্ডগুলোতে নাই।

Comparison : Rumor Scanner

পাশাপাশি, দেশিয় অন্যান্য গণমাধ্যম এবং বিশ্বস্ত কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত মন্তব্যগুলো মির্জা ফখরুল না করলেও গত ২২ সেপ্টেম্বরে কলকাতার বাংলা দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময়’ এর ওয়েবসাইটে মির্জা ফখরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার দাবিতে একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। যেখানে দাবি করা হয়, মির্জা ফখরুল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ চান। তবে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে এ বিষয়ে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতের কলকাতার বাংলা দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময়’-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বলে একটি ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশিত হয়। “নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি কে চান ফখরুল” শিরোনামে গতকাল ওই পত্রিকায় তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়, যা ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব কোন বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দল ও মহাসচিবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য কল্পনাপ্রসূত সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়েছে।’

ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ড যাচাই:

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ‘ডিবিসি নিউজ’ এর লোগো এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫’ উল্লেখ রয়েছে।

এরই সূত্র ধরে ‘ডিবিসি নিউজ’ এর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, ‘ডিবিসি নিউজ’ এর ফেসবুক পেজে গত ২৩ সেপ্টেম্বরে “৩০টি আসন না দেয়ায় পিআর নিয়ে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে জামায়াত। পিআর-টিআর সবই বিএনপির ওপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল।” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। 

Photocard Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের লোগো, ছবি, তারিখ ও তারিখের ফন্টের মিল রয়েছে। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত লেখা ও লেখার ফন্টের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়। ‘ডিবিসি নিউজ’ এর উক্ত মূল ফটোকার্ডটিতে “৩০টি আসন না দেয়ায় পিআর নিয়ে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে জামায়াত। পিআর-টিআর সবই বিএনপির ওপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল।” শীর্ষক বাক্যগুচ্ছ থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে “আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা শেষ পর্যায়ে। ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে জামাতকে ঠেকানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন। আমরা এই তিন শক্তি একত্রে জামাতকে প্রতিহত করে দেব।” শীর্ষক বাক্যগুচ্ছ লেখা হয়েছে। এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডানপাশের নিচের কোণায় ‘জেমিনি’ এআই এর জলছাপ দেখা যায়, যা ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডে থাকে না।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘ডিবিসি নিউজ’ এর এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা (এডিট) করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ড দুইটি ভুয়া এবং ডিবিসি নিউজের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img