গত ৬ মে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে একাধিক বিস্ফোরণের খবর মেলে। ভারত দাবি করে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক অভিযানে তারা জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইয়েবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারতের সাম্প্রতিক উক্ত হামলার জবাবে পাকিস্তান গত ১০ মে সকালে পাল্টা অভিযান শুরু করে, যার নাম দেয় ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১০ মে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আগুনের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি ভারতের উধমপুর বিমানঘাঁটির যা পাকিস্তান ধ্বংস করে দিয়েছে।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট : ঢাকা ট্রিবিউন।
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যম ছাড়া নেটিজেনদের ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি পাকিস্তান কর্তৃক ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরে অবস্থিত উধমপুর বিমানঘাঁটি ধ্বংসের দৃশ্যের নয় বরং, ভারতের রাজস্থানের একটি কারখানায় গত ৮ মে তারিখে লাগা আগুনের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে গৌরভ শর্মা নামের রাজস্থান ভিত্তিক এক সাংবাদিকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৯ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে হিন্দি ভাষায় বলা হয়, “ব্রেকিং নিউজ | রাজস্থানের হনুমানগড় জেলার নোহর এলাকায় অবস্থিত একটি টায়ার কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা সামনে এসেছে। আগুনের কারণে আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার মেঘ ছড়িয়ে পড়ে এবং এই ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনার পর দমকল বিভাগের একাধিক গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। যদিও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে এবং কারখানায় সংরক্ষিত অধিকাংশ সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।…সিটি নিউজ ২৪, রিপোর্টার: গৌরব” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)
এছাড়াও, উক্ত ভিডিওটি লক্ষ্য করলে তাতে প্রদর্শিত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির নাম্বারপ্লেটের শুরুতে RJ দেখতে পাওয়া যায় যা মূলত ভারতের রাজস্থানের গাড়িতে ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে আলোচিত উধমপুর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে অবস্থিত যাদের গাড়ির নাম্বারপ্লেটে মূলত JK দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, গাড়ির এক পাশে হিন্দি ভাষায় ‘ফায়ার সার্ভিস রাজস্থান’ লেখাটিও দেখতে পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গত ৮ মে তারিখে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইটিভি ভারতে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “হানুমানগড় জংশনের শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত একটি অ্যাসিড কারখানায় বৃহস্পতিবার [৮ মে] এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগার পর পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আরও একজন ব্যক্তি কারখানার ভেতরে আটকে পড়েছেন। অ্যাসিড কারখানায় আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে আকাশে দূর থেকেও ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখা যাচ্ছিল।”
এছাড়াও এ বিষয়ে এনডিটিভি রাজস্থান’সহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায় যেগুলোতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত পারিপার্শ্বিক দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে আগুন লাগার কারণের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটি ধ্বংসের নয় বরং, রাজস্থানের একটি অ্যাসিড কারখানায় আগুনের দৃশ্য।
সুতরাং, গত ৮ মে তারিখে রাজস্থানের একটি অ্যাসিড কারখানার আগুনের দৃশ্যকে পাকিস্তান কর্তৃক ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরে অবস্থিত উধমপুর বিমানঘাঁটি ধ্বংসের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র