গত ১৬ জুলাই বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। যে ফটকটি পরে ‘শহীদ আবু সাঈদ গেট’ নামকরণ করেন শিক্ষার্থীরা। আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কও ছিলেন। গতকাল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, আবু সাঈদ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর পরপরই এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরীক্ষাটিতে আবু সাঈদের অংশগ্রহণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। দাবি করা হয়, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক পাশ করতে হয়, সেখানে স্নাতক পাশ না করেও আবু সাঈদের অংশগ্রহণের সুযোগ এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিয়মবহির্ভূত বা অপসংস্কৃতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত হওয়া আবু সাঈদ বৈধভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেই বাংলা ও ইংরেজি দুই বিষয়ের জন্যই মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষক হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ইবতেদায়ী শিক্ষক (বাংলা + ইংরেজি) হিসেবে অংশ নিতে ন্যূনতম যোগ্যতা হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক তথা এইচএসসি/সমমান পাস। অর্থাৎ, সে অনুযায়ী স্নাতক পড়া চলাকালীন বা অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকা অবস্থাতেও স্বাভাবিকভাবেই আবু সাঈদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নানা সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, গতকাল (১৪ অক্টোবর) বিকেলে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, আবু সাঈদ ইবতেদায়ী শিক্ষক (সাধারণ) হিসেবে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন। পরীক্ষায় তাঁর রোল নম্বর ছিল ২০১২৫৬২৯৭। বাবার নাম মো. মকবুল হোসেন। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। ফল প্রকাশের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বাংলা ও ইংরেজি দুই বিভাগেই শিক্ষক হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
এরই সূত্র ধরে রিউমর স্ক্যানার টিম স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করলে ফলাফলের সত্যতা পাওয়া যায়।
আবু সাঈদের অংশগ্রহণকৃত পরীক্ষা তথা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে অনুসন্ধান করলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ০২ নভেম্বর তারিখে উল্লিখিত পরীক্ষাটির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আবেদনপত্র আহ্বান করতে দেখা যায়। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সংযুক্ত ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার অংশ পর্যবেক্ষণ করলে আবু সাঈদের উত্তীর্ণ হওয়া বিভাগ তথা ইবতেদায়ী শিক্ষক, ভাষা (বাংলা ও ইংরেজি) এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এইচ.এস.সি/সমমান। (সমগ্র শিক্ষা জীবনে যেকোন ১টি ৩য় বিভাগ বা শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে।)
অর্থাৎ, এক্ষেত্রে আবেদনের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন হতে স্নাতক পাশ করার প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, প্রচারিত দাবিগুলোতে আবু সাঈদকে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকের ফলাফল প্রত্যাশী। তিনি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। অর্থাৎ ৮ম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে, এখনও ফলাফল পাননি যা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যানেল২৪ প্রতিনিধি ইভান চৌধুরী রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, আবু সাঈদের অংশগ্রহণ করা এনটিআরসিএ এর ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষায় ইবতেদায়ী শিক্ষক (বাংলা + ইংরেজি) পদে অংশগ্রহণ করতে হলে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo – আবু সাঈদ শিক্ষক নিবন্ধনে পাস করলেও দেখে যেতে পারলেন না, আক্ষেপ ভাইয়ের
- Secondary and Higher Education Division – বিজ্ঞপ্তি | অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২০২৩
- Statement of Evan Chowdhury, Begum Rokeya University Correspondent, Channel24
- Rumor Scanner’s own analysis