ভারতে মসজিদ-মাদ্রাসায় উচ্ছেদ অভিযানের এই ভিডিওটি ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পাস হওয়ার পরবর্তী সময়ের নয় 

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হওয়ার পর ওয়াকফ বিলে সম্মতি দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এরই প্রেক্ষিতে “এটা হচ্ছে ভারতের ওয়াকফ বিল পাশের পরের ঘটনা.. মসজিদ, মাদরাসা গুলো উচ্ছেদ অভিযান চালানো শুরু করেছে সেদেশের প্রশাসন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ওয়াকফ বিল উত্থাপন বা পাশ হওয়ার পূর্বে থেকে ইন্টারনেটে ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে। সেক্ষেত্রে আলোচিত ভিডিওটির সাথে ওয়াকফ বিলের কোনো সম্পর্ক নেই।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিও থেকে প্রাপ্ত ইমেজ রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ‘Salman Ali’ নামক ফেসবুক একাউন্টে চলতি বছরের ২৪ মার্চ তারিখে ‘मदरसा बोर्ड मे अगर नहीं हुआ होगा रजिस्ट्रेशन तो मदरसा होगा सील,भगवानपुर तहसील प्रशासन द्वारा संचालित मदरसों की छानबीन’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি রিলস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Facebook 

ভিডিও’র ক্যাপশনটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘মাদ্রাসা বোর্ডে নিবন্ধন না হলে মাদ্রাসা সিল করে দেওয়া হবে, ভগবানপুর তহশিল মাদ্রাসা।’ উক্ত ভিডিওটির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘News State’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২৪ মার্চে ‘Uttarakhand Illegal Madrasa: Haridwar में अवैध मदरसों पर स्ट्राइक, कर दिए कई सील | CM Dhami’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Youtube 

হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের উত্তরাখন্ডের প্রশাসন মাদ্রাসাগুলোর ওপর কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হরিদ্বার, ভগবানপুর এবং লাকসার এলাকার বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ইতিমধ্যে সিলগালা করে দিয়েছে। 

এছাড়া, ‘DD NEWS UTTARAKHAND’ নামক আরেকটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই অফিসারদের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দেখা যায়। যা আলোচিত ভিডিওটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

Image comparison by Rumor Scanner 

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো। 

মূলত, ভারতে পাস হওয়া ওয়াকফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নানা প্রান্তে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে। পাশাপাশি ভারতীয় শীর্ষ আদালতেও আইনটি বাতিলের দাবিতে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছে। তবে, দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিতর্কিত ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করে তা বাজেয়াপ্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পাস হওয়ার পূর্বে থেকে ইন্টারনেটে এর অস্তিত্ব রয়েছে। 

উল্লেখ্য, এর আগে ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত বিষয়ে ‘আসাদউদ্দিন ওয়াইসি লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পাস হওয়ায় কান্না করছেন’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ভিন্ন ঘটনায় পূর্বে ধারণ করা ভিডিওকে সম্প্রতি ওয়াকফ বিল (সংশোধিত) পাস হওয়ার পরবর্তী সময়ে ভারতের মসজিদ, মাদ্রাসা উচ্ছেদের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img