সম্প্রতি, মাগুরা- ১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের আলোচিত দ্বন্দ্ব নিরসনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা তাদের দুজনকে সাথে নিয়ে একটি লাইভ আলোচনা করেছেন দাবিতে ‘সাকিব সুমনের ঝগড়া মিটিয়ে দিলেন মাশরাফি তিন জন একসাথে লাইভে একি বললেন ভাইরাল ভিডিও’ এবং ‘তিন এমপি একসাথে লাইভে ব্যারিস্টার সুমনকে দেখে ভয় পেলো সাকিব’ শীর্ষক পৃথক দুটি শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আলোচিত দ্বন্দ্ব নিরসনে মাশরাফি বিন মর্তুজা তাদেরকে সাথে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো লাইভ আলোচনা করেননি। বরং, ভক্তদের উদ্দেশ্যে সাকিব আল হাসানের দেওয়া একক একটি বক্তব্যের ভিডিওর সাথে ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মর্তুজার একটি লাইভ প্রোগামের কিছু অংশ এবং জার্মানিভিত্তিক গণমাধ্যম DW আয়োজিত একটি টকশোর কিছু অংশ কাট করে আলোচিত লাইভ ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে সাকিব আল হাসানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয় তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। অবশ্যই খুবই সেনসিটিভ… ভুল-ত্রুটি হবেই। ভুল-ত্রুটি নিয়েই আমরা আসলে জীবনে চলাচল করি। আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্যেও আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।… অবশ্যই আমি এজন্যে আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী এবং আমি মনে করি আপনারা এটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেটিও চেষ্টা করবো। এমন কিছু যেন আমরা না করি যাতে মানুষ আমাদেরকে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ফেলে দেয় যে আমরা আসলে এক নাকি আলাদা। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এক থাকবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শক্তিশালী’।
এছাড়াও ভিডিওটিতে মাশরাফিকে বলতে শোনা যায়, “কাপ্তান সাহেব আসসালামু আলাইকুম…সব সমস্যা তুই-ই বাঁধাইয়া দিস… আজকে মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে…তুই যে পুংঠার পুংঠা তুই সবাইরে নাড়াইয়া বেড়াস।” তবে পুরো ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমনকে কোনো কথা বলতে দেখা যায় না।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত লাইভ ভিডিওটিতে ব্যবহৃত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে সাকিব আল হাসানের ক্লিপটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Shakib Al Hasan নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাকিব আল হাসানের অংশের বেশকিছু অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে বেনাপোল বন্দর ইমিগ্রেশনে একজন ভক্ত সাকিব আল হাসানের সাথে সেলফি তুলতে আসছে সাকিব তার ফোনটি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার আলোচিত ঘটনাকে ভিত্তি করে তিনি উক্ত ভিডিও বার্তাটা প্রচার করেন। যেখানে তিনি তার ভক্তদের কাছে উক্ত ঘটনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যার সাথে ব্যারিস্টার সুমনের সাথে তার আলোচিত দ্বন্দ্বেরের কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও ভিডিওটি মাশরাফি ও ব্যারিস্টার সুমনের সাথে করা কোনো লাইভ প্রোগামের নয়।
পরবর্তীতে মাশরাফির ফুটেজটি অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিও থেকে কিছু কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ক্রিকেটার তামীম ইকবালের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ৫ মে #TI28 Tamim Iqbal Live with Mashrafe Bin Mortaza শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওর মাশরাফি বিন মর্তুজার ফুটেজের বেশকিছু অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এছাড়াও জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি প্রচারের সময় ক্রিকেটার তামিম ইকবাল তার ইউটিউব চ্যানেলে দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রায়ই লাইভ ভিডিও প্রচার করতেন। যেখানে তিনি তাদের সাথে ক্রিকেট নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা করতেন।
সর্বশেষ ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিওটি অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওর সুমনের অংশের ফুটেজ থেকে কিছু কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ জানুয়ারি কে সরকারি কে বিরোধী? শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি সরাসরি সম্প্রচারকৃত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যারিস্টার সুমনের ফুটেজের কিছু অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও থেকে আরও জানা যায়, জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম DW এর বাংলা বিভাগের প্রধান সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের জনপ্রিয় টক শো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ এ সম্প্রতি গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। উক্ত প্রোগ্রামে খালেদ মুহিউদ্দীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা সময়ে চলা আন্দোলন ও সংসদের বিরোধীদল নিয়ে অতিথিদের সাথে নানা আলোচনা করেন। যার সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
পরবর্তীতে মাশরাফি বিন মর্তুজা আসলেই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে কোনো আলোচনা করেছেন কিনা তা জানতে প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান ২০২৩ সালে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে দেখে মারতে উদ্ধত হন বলে অভিযোগ তুলে সেসময় নিজের ফেসবুক পেজে একটি লাইভ ভিডিও প্রচার করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। ভিডিওটিতে তিনি জানা, ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ চলাকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে উক্ত ঘটনাটি ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই ব্যক্তি উভয়ই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের পূর্বের দ্বন্দ্বের উক্ত বিষয়টি পুনরায় ইন্টারনেটে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা তাদের দুজনকে সাথে নিয়ে একটি লাইভ আলোচনা করে তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সুরাহা করে দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাশরাফি বিন মর্তুজা এমন কোনো লাইভ প্রোগাম করেননি। প্রকৃতপক্ষে, কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও সাকিব আল হাসানের আলোচিত দ্বন্দ্ব নিরসনে মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ এই তিন সাংসদের একত্রে লাইভ করার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Shakib Al Hasan Youtube Channel: November 16, 2020
- Tamim Iqbal Youtube Channel: #TI28 Tamim Iqbal Live with Mashrafe Bin Mortaza
- DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় Youtube Channel: কে সরকারি কে বিরোধী?
- Rumor Scanner’s Own Analysis