চট্টগ্রামে স্কুলে হিজাব পড়ায় ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগের সংবাদ বিকৃত করে প্রচার

সম্প্রতি, “চট্টগ্রামে হিজাব পরায় ছাত্রীকে হেনস্তা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি স্ক্রিনশট ‘দৈনিক নয়া দিগন্ত’ এর প্রকাশিত সংবাদ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, “চট্টগ্রামে হিজাব পরায় ছাত্রীকে হেনস্তা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া” শীর্ষক কোনো সংবাদ দেশীয় সংবাদমাধ্যম ‘নয়া দিগন্ত’ প্রকাশ করেনি বরং নয়া দিগন্তের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট বিকৃত করে তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

মূলত, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ তুলেন ঐ বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী।

উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘দৈনিক নয়া দিগন্ত’ এর অনলাইন সংস্করণে গত ২৯ মার্চ মিরসরাইয়ে হিজাব পরায় স্কুলছাত্রীকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাতের অভিযোগ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

screenshot naya diganta

পরবর্তীতে, নয়াদিগন্তের উক্ত শিরোনাম সম্বলিত প্রতিবেদনটির পোস্টের একটি স্ক্রিনশট ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে “চট্টগ্রামে হিজাব পরায় ছাত্রীকে হেনস্তা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া” শিরোনামে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

বিকৃত
Viral Edited Screenshot

প্রসঙ্গত, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক হেনস্তা ও মারধরের শিকার হয়েছেন দাবি করে গত ৩০ মার্চ স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ঐ স্কুল ছাত্রী। তবে, শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উক্ত অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন মীরসরাইয়ের ইউএনও মিনহাজুর রহমান যা গত ৯ এপ্রিল দেশীয় মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউন এ প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে জানা যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,

“ঘটনার দিন পিটি সেশনের পর তাকে মারধর করা হয়। বলে ওই ছাত্রী অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু স্কুলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, সেদিন সে পিটিতে অংশই নেয়নি। ওইদিন সে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে স্কুলে আসে। অভিযোগকারী ছাত্রী তার দুই সহপাঠীকে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে দাবি করেছিল। তারা জানায়, সেদিন পিটির পর প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ওই ছাত্রীর দেখাই হয়নি। সহপাঠীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে তারা আরও জানায়, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই তাদের সাক্ষী করা হয়েছে।”

ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়,

“স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে ঘটনার দিন পিটি শেষে বেলা ১০টা ৫৪ মিনিটে তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তাদের মধ্যে অভিযোগকারী ছাত্রী ছিল না।”

উক্ত বিষয়ে মীরসরাইয়ের ইউএনও মিনহাজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, “অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, জোড়ারগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তবে ওই ছাত্রীর অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করেছে। সেখানে মারধরের মতো কোনো কিছুই চোখে পড়েনি।”

এছাড়া উক্ত বিষয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি মাকসুদ আহমেদ চৌধুরী জানান, , “আলোচিত ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটিও ওই ছাত্রীর অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্কুলে ৭০টি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। পুরো স্কুলের সব জায়গা সার্বক্ষণিক সেগুলোর মাধ্যমে নজরদারি করা হয়। কর্তৃপক্ষ সবগুলো ফুটেজই পুঙ্খানুপূঙ্খভাবে খতিয়ে দেখেছে, কিন্তু এমন কিছু পাওয়া যায়নি। ওই ছাত্রীর অভিযোগ সন্দেহজনক।”

মাকসুদ আহমেদ চৌধুরী জানান, “ওই ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। অথচ এই অভিভাবক ঘটনার কিছুই জানেন না।”

উল্লেখ্য, গতকাল ১১ এপ্রিল নয়া দিগন্তের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়,

” নয়া দিগন্তের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। 

একটি বিকৃত শিরোনামে দৈনিক নয়া দিগন্তের লগো ও ছবি ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

গত ২৯ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি খবরের শিরোনাম বিকৃত করে এ অপপ্রচার চালানো হয়েছে। 

প্রকাশিত ওই খবরটির প্রকৃত শিরোনাম ছিল ‘মিরসরাইয়ের হিজাব পরায় স্কুলছাত্রীকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাতের অভিযোগ।’ কিন্তু বিকৃত করে প্রচার করা শিরোনামে দেখা যাচ্ছে- লেখা রয়েছে ‘চট্টগ্রামে হিজাব পরায় ছাত্রীকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া’। 

বিকৃত এ শিরোনামটি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেককে ফেসবুকে শেয়ার করতে দেখা যায়। অবশ্য পরে কেউ কেউ তা সরিয়েও নিয়েছেন।”

এছাড়াও, স্ক্রিনশটটি আসলে বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত তথ্যটি এডিট/বিকৃত হয়ে ছড়ানোর আগেই ফেসবুকে উক্ত সংবাদের প্রকৃত স্ক্রিনশট সম্বলিত পোস্টের অস্তিত্ব রয়েছে।

সুতরাং, “চট্টগ্রামে হিজাব পরায় ছাত্রীকে হেনস্তা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া” শীর্ষক শিরোনামে দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম নয়াদিগন্তের সংবাদ দাবি করে একটি বিকৃত স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।

[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]

  • Claim Review: চট্টগ্রামে হিজাব পরায় ছাত্রীকে হেনস্তা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া
  • Claimed By: Facebook Posts
  • Fact Check: False

[/su_box]

তথ্যসূত্র

Nayadiganta: মিরসরাইয়ে হিজাব পরায় স্কুলছাত্রীকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাতের অভিযোগ

https://www.facebook.com/33506003974/posts/10161864071428975/

Dhaka Tribune: মীরসরাইয়ে হিজাব পরায় মারধর: বানোয়াট কাহিনি, মেলেনি প্রমাণ

আরও পড়ুন

spot_img