সম্প্রতি, “শ্বাসরোধ করে শিক্ষককে হত্যার চেষ্টায় অভিযুক্ত এক ছাত্রী। এমনটাই ঘটেছে রাজধানী ঢাকায়। দায়ের হয়েছে অভিযোগও। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিস্তারিত কমেন্টে।” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্তনযুগলের মাঝে শ্বাসরোধ করে ঢাবি শিক্ষককে হত্যা চেষ্টা শীর্ষক ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এই সংক্রান্ত ভাইরাল স্ক্রিনশটের প্রতিবেদনটি একটি ভুঁইফোঁড় অনলাইন পত্রিকার যা ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো।
ঘটনাটির সূত্র হিসেবে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক পোস্টগুলোর কমেন্টবক্সে প্রদত্ত PNS News 24 নামের ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালের একটি প্রতিবেদনের লিংক খুঁজে পাওয়া যায় যা ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে “স্তনযুগলের মাঝে শ্বাসরোধ করে শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা, তোলপাড় ঢাবিতে!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিলো।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হক তার বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী এবং ছাত্রলীগ নেত্রী ফতেমা খানম এর বিরুদ্ধে স্তনযুগল দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে খুনের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন এবং সেখানে এনামুলকে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দাবি করা হয়’।
এছাড়া, PNS News 24 এর প্রতিবেদনে ফিচার ফটো হিসেবে ব্যবহৃত ছবিটির অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এটি বাংলাদেশী একজন টেলিভিশন অভিনেত্রীর পুরোনো ছবি।
একই তথ্য, Mujib Sena News নামের অপর আরেকটি ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে একই শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়।
সূত্রপাত এবং অনুসন্ধান
বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে Aparadh Kantha নামের ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারিতে “স্তন দিয়ে মুখ চেপে হত্যার চেষ্টা ছাত্রী সংস্থার নেত্রীর!” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ও তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে একই তথ্যটি সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি এনামুল হক নামে প্রকাশ করা হয়েছিলো।
পরবর্তীতে বিস্তর অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম ইসলামী ছাত্রশিবির সাতকানিয়া উপজেলা (পূর্ব) শাখার সভাপতি এনামুল হক এর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্ট ও ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোতে ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারিতে “সাতকানিয়ায় শিবির নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেই মূলত জানা যায় সেখানে গ্রেফতারকৃত শিবির নেতার নাম ছিলো এনামুল হক, যিনি তৎকালীন ইসলামী ছাত্রশিবির সাতকানিয়া উপজেলা (পূর্ব) শাখার সভাপতি ছিলেন।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, অপরাধ কন্ঠ নামের ভুঁইফোড় অনলাইন পত্রিকায় ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ তেই প্রথম “স্তন দিয়ে মুখ চেপে হত্যার চেষ্টা ছাত্রী সংস্থার নেত্রীর!” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিলো যা জনাব এনামুল হক এর গ্রেফতার হওয়ার মাত্র দুইদিন পর। এছাড়া, অপরাধ কন্ঠের প্রতিবেদনে জনৈক এনামুল হককে সাতকানিয়ার বাজালিয়া এলাকার উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি উল্লেখ করা হয় যার সাথে দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে গ্রেফতার হওয়ার ব্যক্তির পরিচয়ের প্রায় হুবহু মিল রয়েছে।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সেসময়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ২৫ জানুয়ারিতে আদালতে পাঠানো হয়েছিলো। তবে, পরবর্তী কত তারিখে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের জামিন মঞ্জুর হয়েছিলো এ বিষয়ে কোন তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি। কিন্তু, অপরাধ কন্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ভুক্তভোগী ব্যক্তি সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন বলা দাবি করা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সেসময়ে সেই নামের প্রকৃত ব্যক্তি ভিন্ন একটি মামলায় পুলিশ হেফাজতে ছিলেন।
অর্থাৎ, গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজত থেকে বের হয়ে অপরাধ কন্ঠে দাবি করা সেই ঘটনায় ভুক্তভোগী হয়ে পুনরায় পুলিশের কাছে এসে মামলা দায়ের করার বিষয়টি পুরোপুরি অযৌক্তিক।
এছাড়া, বাংলা নিউজ ২৪-এ ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বরে “অবশেষে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের নামের তালিকায় এনামুল হক নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, স্তনযুগলের মাঝে শ্বাসরোধ করে শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা শীর্ষক তথ্যটি ঢাবি শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এর নামে ২০১৫ সালে প্রচারিত হওয়ার আগেই ২০১৪ সালে তথ্যসূত্র ছাড়া ভিত্তিহীন এই ঘটনাটি সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি এনামুল নামে প্রথম প্রচার করা হয়েছিলো।
আরো পড়ুনঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্কুল ছাত্র ইয়াসিনের সার্ক সেরা বক্তা হওয়ার তথ্যটি মিথ্যা
সর্বোপরি, স্তনযুগলের মাঝে শ্বাসরোধ করে ঢাবি শিক্ষককে হত্যা চেষ্টা দাবিতে এবং পূর্বে এক শিবির সভাপতির ঘটনা দাবিতে প্রচারিত এই তথ্যগুলোর কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে, উপরোক্ত সকল তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে দাবিগুলো পুরোপুরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
মূলত, ২০১৫ সালে ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি বানোয়াট ঘটনার সংবাদের স্ক্রিনশট বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যার ফলে নেটিজেনদের মধ্যে উক্ত বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, স্তন দিয়ে হত্যা চেষ্টা সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক ঘটনার তথ্য The Mirror এবং Daily Mail এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১২ সালের ২২ নভেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিলো।
সুতরাং, স্তনযুগলের মাঝে শ্বাসরোধ করে ঢাবি শিক্ষককে হত্যা চেষ্টা শীর্ষক প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যা।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
- Claim Review: স্তনযুগলের মাঝে শ্বাসরোধ করে শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা
- Claimed By: Facebook Posts
- Fact Check: False
[/su_box]
তথ্যসূত্র
- PNS News Archive: https://archive.ph/otoQ1
- crazy gallery: http://crazy-gallery.blogspot.com/2014/03/bangladeshi-hot-model-srabonti-kar.html?m=1
- Mujibsena news: https://archive.ph/RDzyV
- Aparadh Kantha: https://aparadhkantha.wordpress.com/2014/01/27/114/
- Aparadh Kantha FB Post: https://www.facebook.com/378886745490924/posts/10202268327283582/
- Bazalia Facebook Page: https://www.facebook.com/592079390859993/posts/631311873603411/
- Prothom Alo: https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%B9-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A7%AC
- Banglanews24: https://www.banglanews24.com/national/news/bd/68529.details
- Daily Mail: https://www.dailymail.co.uk/news/article-2236797/German-lawyer-claims-38DD-girlfriend-tried-smother-death-breasts.html
- Mirror: https://www.mirror.co.uk/news/weird-news/woman-tried-to-kill-boyfriend-with-dd-1450638.amp