ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ সংক্রান্ত সমকালের প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, ২০২৩ সালের

সম্প্রতি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) উদ্ধৃত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন দাবিতে জাতীয় দৈনিক সমকালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ড. ইউনুস: এনবিআর” শিরোনামে সমকালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের মে মাসে সমকালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের স্থিরচিত্র সাম্প্রতিক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে সমকালের আলোচিত প্রতিবেদনের স্থিরচিত্রটি পর্যবেক্ষণ করে এর উপরের বাম পাশে ‘১৭ আগস্ট ২০২৫’ লেখা দেখতে পায় রিউমর স্ক্যানার। পরবর্তীতে, সমকালের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ০৭ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Samakal by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটিতে প্রবেশ করার পর এর উপরের বাম কোনে আজকের তারিখ অর্থাৎ ‘২৭ আগস্ট ২০২৫’ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া প্রতিবেদনটির বাইলাইনের নিচে থাকা প্রতিবেদন প্রকাশের ডেটলাইনের স্থানে ‘০৭ মে ২০২৫’ লেখা উল্লেখ পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, উক্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার তারিখ বাদ দিয়ে আলোচিত স্ক্রিনশটটি নেওয়া হয়েছে। 

অর্থাৎ, প্রতিবেদনে প্রবেশকালের সময়কে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় হিসেবে প্রচারের মাধ্যমে আলোচিত বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে।

সমকালের এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে হাইকোর্টে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করা এক মামলায় বলা হয়েছে, পাঁচ বছরে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সেসময় রাষ্ট্রপক্ষের দাবি অনুযায়ী – ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকারের পাওনা অর্থগুলোর মধ্যে একটি হলো গ্রামীণ কল্যাণ ৫৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। গ্রামীণ কল্যাণের আরেকটিতে ৩৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৭ টাকা এবং গ্রামীণ টেলিকমের একটিতে সরকারের পাওনা ২১৫ কোটি টাকা।

সেসময় এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হাইকোর্টকে জানিয়েছে, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমসহ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ২০১২-১৭ সালে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, শুধু গ্রামীণ কল্যাণ থেকেই সরকারের পাওনা ৬৬৬ কোটি টাকার বেশি। 

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ০৩ অক্টোবর ড. ইউনূসকে দেয়া ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধের রায় প্রত্যাহার করেছে হাইকোর্ট। 

পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে এনবিআর কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা দায়ের করার সপক্ষে কোনো সংবাদ দেশিয়, আন্তর্জাতিক এবং নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ড. ইউনূস বিরুদ্ধে এনবিআর কর্তৃক ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকির পুরোনো মামলার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img