সম্প্রতি, “ব্রাজিলের বন্যার্তদের জন্য ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড দান করেছে লিওনেল মেসি” শীর্ষক একটি তথ্য সম্বলিত ফটোকার্ড দেশের বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি প্রকাশ করেছে দাবিতে অসংখ্য পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
যমুনা টিভি সম্পর্কিত আলোচিত দাবির ফেসবুক পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
পাশাপাশি একই তারিখে শুধুমাত্র ছবি পরিবর্তন করে “ব্রাজিলের বন্যার্তদের জন্য ২০০ বিলিয়ন পাউন্ড দান করেছে লিওনেল মেসি” শীর্ষক আরেকটি তথ্য সম্বলিত যমুনা টিভির ফটোকার্ড দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আরেকটি ফটোকার্ড পোস্ট হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা টিভি “ব্রাজিলের বন্যার্তদের জন্য ১০০ মিলিয়ন বা ২০০ বিলিয়ন পাউন্ড দান করেছে লিওনেল মেসি” শীর্ষক দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। এমনকি সম্প্রতি এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ অন্য কোনো গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যমুনা টিভির ফটোকার্ড নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো যে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তাদের অর্থাৎ যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়েছে তা খুঁজে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় রিউমর স্ক্যানার। যমুনা টিভির কথিত এই ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ফটোকার্ডগুলো প্রকাশের তারিখ গত ৭ মে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূত্র ধরে যমুনা টিভি’র ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদের অস্তিত্ব মেলেনি।
এছাড়াও, আলোচিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের বেশকিছু অমিল খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের ফন্ট, ফন্ট সাইজ, ফন্টের কালার গ্রেডিং, পিকচার রেজ্যুলেশনে অমিল দেখা যায়। এছাড়াও ফটোকার্ডের একদম নিচে ইন্ট্রো বারটি ঝাপসা দেখা যাচ্ছে, যা যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডে থাকে না। যমুনা টিভির আসল ফটোকার্ডে একটি জলছাপ দেখা যায়, যা উক্ত দাবিকৃত ফটোকার্ডে নেই।
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত আলোচিত ফটোকার্ডগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।
ব্রাজিলের বন্যার্থদের সহায়তায় আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি সম্প্রতি এমন কোনো অনুদান প্রদান করেছেন কিনা তা জানতে মেসির ফেসবুক, পেজ ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ইন্টারনেটে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সম্পর্কিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ব্রাজিলে গত ৮০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য রিও গ্রাঞ্জে দো সুলে রেকর্ড বন্যায় চার লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১২৬ জনের আর নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৪১ জন। ব্রাজিলের অনেক শহর, রাস্তা নদীতে পরিণত হয়েছে। ভেঙে গেছে সেতু ও রাস্তা। ঘটছে ভূমিধসের মতো ঘটনা। তাছাড়া একটি বাঁধের এক অংশ ভেঙে গেছে। ফেডারেল সরকার বন্যায় ১,৪৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে।
মূলত, সম্প্রতি “ব্রাজিলের বন্যার্তদের জন্য ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড দান করেছে লিওনেল মেসি” এবং “ব্রাজিলের বন্যার্তদের জন্য ২০০ বিলিয়ন পাউন্ড দান করেছে লিওনেল মেসি” শীর্ষক দাবিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভি’র ডিজাইন সম্বলিত পৃথক দুইটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা টিভি এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ থেকে ফটোকার্ড সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবি সম্বলিত ফটোকার্ডগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ব্রাজিলের বন্যার্তদের জন্য ১০০ মিলিয়ন কিংবা ২০০ বিলিয়ন পাউন্ড দান করেছেন লিওনেল মেসি শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Jamuna TV: Facebook Page
- Jamuna TV: Website
- Rumor Scanner’s Own Analysis