জাতিসংঘ কর্তৃক শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার গুজব 

সম্প্রতি, “জাতিসংঘে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ, হাসিনাকে ধ্বংস করলো ড. ইউনূস” শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফেসবুক প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের কোনো নির্দেশনা দেয়নি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে উক্ত ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর Al Minar নামের ইউটিউব চ্যানেলে জাতিসংঘে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ, হাসিনাকে ধ্বংস করলো ড. ইউনূস” শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) প্রকাশ করা হয়৷ 

১৪ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, ভিডিওটির থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘের প্রসিডেন্টের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই 

প্রচারিত ভিডিওটির শুরুতে দেশীয় বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির একটি ভিডিওর কিছু অংশ প্রচার করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সময় টিভির ভিডিওটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিমের। ৩ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২৭ সেকেন্ড থেকে ৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত কেটে আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে পিনাকী ভট্টাচার্যের ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ২ জুলাই “প্রফেসর ইউনূস কি হাসিনাকে হটাচ্ছেন?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ১০ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই এক ব্যক্তি মনগড়া ভাবে কথা বলে যাচ্ছেন।

প্রচারিত ভিডিওটিতে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজকেও কথা বলতে দেখা যায়। 

পরবর্তীতে মোস্তফা ফিরোজের মূল ভিডিওটি অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে Voice Bangla নামক একটি ফেসবুক পেজে গত ১৭ সেপ্টেম্বর “বাংলাদেশ বিষয়ে ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশের প্রভাব পড়তে পারে তৈরি পোশাক খাতে?” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

৬ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মোস্তফা ফিরোজ দৈনিক যুগান্তরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর “বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশ, যে প্রভাব পড়ার শঙ্কা” (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনাচ্ছেন৷  

এছাড়াও একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘ পদত্যাগের নির্দেশ দিলে তা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু, উক্ত দাবি সম্পর্কে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি জাতিসংঘের ওয়েবসাইটেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো বিষয় উল্লেখ নেই। 

মূলত, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক গমন করেন। এর মধ্যেই জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে নিউইয়র্কে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট-এ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ নিয়ে ইন্টারনেটে গুজব ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img