ভারতের তাইমারা অঞ্চলে গেলে ফোনের তারিখ বদলে যাওয়ার  দাবিটি গুজব 

সম্প্রতি ‘রহস্যময় তাইমারা উপত্যকায় গেলে বদলে যায় ফোনের তারিখ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

যা দাবি করা হচ্ছে

Durbin News‘ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে গত ৭ জুলাই ‘যেই অঞ্চল দিয়ে গেলে বদলে যায় ফোনের তারিখ!’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাচি-টাটা ন্যাশনাল হাইওয়েতে অবস্থিত তাইমারা নামক রহস্যময় অঞ্চল অতিক্রমের সময় ফোনের সময় পরিবর্তন হয়ে যায়। এবং পরিবর্তিত সময়টি ভবিষ্যৎ এর কোনো সময়কে নির্দেশ করে অর্থাৎ ২০২৩ সালে যদি কোনো ব্যাক্তি সেই অঞ্চল দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যায় তাহলে তার ফোনে সময় পরিবর্তিত হয়ে ২০২৪ কিংবা ২০২৫ সাল দেখাবে। 

একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন  TrueScoope, ZEENEWS

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের ঝাড়খন্ডের তাইমারা উপত্যকা অতিক্রমের সময় ফোনের সময় পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তাইমারা উপত্যকায় এমন কোনো ঘটনা ঘটে না বরং এটি সম্পূর্ণ গুজব। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতের একটি আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যম Prabath Khabar এ ২০২২ সালের ১১ জুলাই ‘Taimara Valley Fact Check: Neither time nor date has changed in mobile, Prabhat Khabar has done a complete investigation’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Prabhat Khabar

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সরেজমিনে বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে প্রভাত খবর গণমাধ্যমটি তাদের কয়েকজন সাংবাদিককে তাইমারা উপত্যকায় পাঠায়। সেখানে তারা ৪ ঘন্টা অবস্থান করেছে এবং তাদের কারোর ফোনেরই সময় বা তারিখ পরিবর্তন হয়নি। পাশাপাশি তারা স্থানীয়দের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেও বিষয়টির কোনো প্রকার সত্যতা খুঁজে পায়নি। 

এছাড়া গণমাধ্যমটির কর্মীরা স্থানীয় কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ের উপস্থিতির ডিজিটাল রেকর্ডারে তারিখ পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার যে দাবি উঠেছিল, তা নিয়ে অনুসন্ধানে জানতে পারে যে, বিদ্যালয়টিতে ঘটনাটি একবারই মাত্র ঘটেছিল। তবে এটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও ঘটতে পারে বলে সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। 

সর্বোপরি, গণমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ গুজব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।  

এছাড়াও একই বিষয়ে ভারতের আরো একটি আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যম Jagran  এ ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট ‘Know the truth of Jharkhand’s Taimara Valley, does the year really change here, read the full story’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যেখান থেকে এই গুজবের সূত্রপাত অর্থাৎ কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়টি তাইমারা উপত্যকাতেই অবস্থিত নয়। বিদ্যালয়টি জামচুন নামক অন্য এক এলাকায় অবস্থিত, যেটি তাইমারা উপত্যকা থেকে অনেক দূরে। 

Screenshot source : Jagran

পাশাপাশি উক্ত সংবাদ মাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিক তাইমারা উপত্যকায় নিজের মোবাইলে  সময় যাচাই করে দেখেছেন  এবং ছবিও তুলেছেন, কিন্তু সময় বা তারিখে কোনো ধরনের পরিবর্তন তারা দেখতে পাননি। 

মানুষের পক্ষে মোবাইলের সময় পরিবর্তন করে ভবিষ্যতের সময় আনা সম্ভব

যেমন, নিচে প্রদর্শিত স্ক্রিনশটটিতে লক্ষ্য করুন। ২০২৩ সালের ৩১ শে জুলাই তারিখে একই সময়ে ২০২৪ সাল থেকে আসা একটি মিসড কল রয়েছে এখানে। যা মোবাইলের ডেট অ্যান্ড টাইমসের সেটিংস পরিবর্তন করে অন্য আরেকটি ডিভাইস থেকে কল করে এমন ‘ভবিষ্যৎ থেকে আসা মিসড কল’ রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান থেকেই ভবিষ্যত অনুযায়ী এক বছর সময় এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

Screenshot: Rumor Scanner Analysis

মূলত, সম্প্রতি ভারতের তাইমারা অঞ্চল অতিক্রম করার সময় মোবাইলের সময় পরিবর্তন হয়ে ভবিষ্যতের  সময়কে নির্দেশ করে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার কর্মা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, তাইমারা উপত্যকায় এমন কোনো ঘটনা আদতে ঘটে না। বরং মোবাইল ফোনের সময়ের সেটিংস পরিবর্তন করে বর্তমানে থেকেও ভবিষ্যত থেকে কল পাওয়া সম্ভব। 

সুতরাং, ভারতের তাইমারা উপত্যকা দিয়ে যাওয়ার সময় ফোনের সময় পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img