ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসানের ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণের গুজব

সম্প্রতি, “২০০৮ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা মাহমুদুল হাসান ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলা মাহামুদুল হাসানের নাম হয়েছে বিকাশ রঞ্জন দাস। এরপর থেকে তিনি আর বাংলাদেশের পক্ষে কোন ম্যাচ খেলেননি।…” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

মাহমুদুল হাসানের

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহমুদুল হাসান নামের কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার ইসলাম ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেননি, বরং বিকাশ রঞ্জন দাস নামে সাবেক এক ক্রিকেটার হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছিলেন। যিনি মুসলিম হওয়ার পর মাহমুদুল হাসান নামে পরিচিত হন।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল “রাজিন সালেহের নামাজ পড়া দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন যে পেসার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সতীর্থ সাবেক তারকা ক্রিকেটার রাজিন সালেহের নিয়মিত নামাজ পড়া দেখে ইসলামের ওপর ভালোবাসা জন্মায় বিকাশ রঞ্জনের। পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এক সময়ের তারকা বিকাশ রঞ্জন দাস। তার নাম এখন মাহমুদুল হাসান। 

প্রতিবেদনটিতে সূত্র হিসেবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনে বিকাশ রঞ্জন দাস (বর্তমান মাহমুদুল হাসান) কে নিয়ে করা একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়। 

পরবর্তীতে যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল “বাংলাদেশ জাতীয় দলের একমাত্র ধর্মান্তরিত ক্রিকেটার বিকাশ রঞ্জন মুসলমান হয়ে তিনি এখন মাহমুদুল হাসান, কেমন চলছে নতুন জীবন?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিকাশ রঞ্জন দাস (বর্তমান মাহমুদুল হাসান) জানান, তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

এছাড়া, একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় জাগো নিউজ২৪ এর প্রতিবেদনেও।

এরপর, আলোচিত দাবির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময় এর ওয়েবসাইটে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর “মাহমুদুল হাসান থেকে ধর্ম বদলে বিকাশ রঞ্জন, আর খেলার সুযোগই পেলেন না এই বাংলাদেশি তারকা” (আর্কাইভ)- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিকাশ রঞ্জন দাস থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বর্তমানে মাহমুদুল হাসান হওয়ার ঘটনাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

এছাড়া, উক্ত প্রতিবেদন যে ছবি প্রচার করা হয়েছে তা বিকাশ রঞ্জন দাস (বর্তমান মাহমুদুল হাসান) এর নয়, ছবিটি আরেক ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসান জয়ের

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৯ এর যে ম্যাচে বিকাশ রঞ্জন দাসের (বর্তমান মাহমুদুল হাসান) অভিষেক হয়েছিল সেই একই ম্যাচে টিমে মাহমুদুল হাসান নামে আরও একজন ক্রিকেটার ছিলেন। তবে, তিনি এখনো একই নামে আছেন এবং তার ধর্ম পরিবর্তনের কোনো তথ্যও গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে বিকাশ রঞ্জন দাস ব্যতীত আর কোনো ক্রিকেটারের ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো তথ্য গণমাধ্যমে বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলে অভিষেক হয়েছিল বিকাশ রঞ্জন দাস (বর্তমান মাহমুদুল হাসান) নামের একজন পেসার। একই টিমে মাহমুদুল হাসান নামের আরেকজন খেলোয়াড় জায়গা পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিকাশ রঞ্জন দাস হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বিকাশ রঞ্জন দাস নাম পরিবর্তন করে মাহমুদুল হাসান নামে পরিচিত হন। নিজ ইচ্ছায় খেলাধুলা ছেড়ে ক্যারিয়ার গড়েন ব্যাংকার হিসেবে। তবে, একই টিমে জায়গা পাওয়া মাহমুদুল হাসান নামের অন্যজন ধর্মান্তরিত হননি এবং তার নাম মাহমুদুল হাসানই রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম “এই সময়” গত বছর একটি প্রতিবেদনে উক্ত ঘটনাটি সম্পূর্ণ উল্টোভাবে উপস্থাপন করে সংবাদ প্রকাশ করে। এই সময় এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদে দাবি হয়, ‘মাহমুদুল হাসান থেকে মুসলিম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে বিকাশ রঞ্জন হয়েছেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের হয়ে আর খেলার সুযোগই পেলেন না এই ক্রিকেটার।’ সম্প্রতি সেই সংবাদের প্রেক্ষিতে মাহমুদুল হাসান নামের একজন ক্রিকেটার মুসলিম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে নাম রেখেছেন বিকাশ রঞ্জন দাস শীর্ষক দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সুতরাং, মাহমুদুল হাসান নামের এক বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বিকাশ রঞ্জন দাস নাম গ্রহণ করেছিলেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img