কোকা-কোলার প্রথম দিকের কোনো ক্যান সবুজ রঙের ছিলো না

সম্প্রতি, “কোকা কোলা প্রথমে সবুজ ক্যানে ছিল কারণ কোকা পাতা যা থেকে এটি তৈরী হত, সেটি সবুজ ছিল!” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

Screenshot from Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি কোকা-কোলার প্রথমদিকের ক্যানের নয় বরং এটি ২০১৪ সালে স্বাস্থ্যকর হিসেবে লঞ্চ করা কোকা-কোলার তৎকালীন নতুন ভ্যারিয়েন্ট “Coke Life” এর ক্যানের ছবি।

কি-ওয়ার্ড সার্চে, ‘Coca-Cola Great Britain’ এর ওয়েবসাইটে ‘FAQ’ সেকশনে “Was Coca‑Cola liquid originally green?” শীর্ষক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from coca-cola website

কোকা-কোলা পানীয় শুরুতে সবুজ ছিলো কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “না। ১৮৮৯ সালে কোকা-কোলার আবিষ্কারের সময় থেকে এখন পর্যন্ত এটি একই আছে।”

পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড সার্চে “The Coca-Cola Company” এর ওয়েবসাইটে “The History of the Coca-Cola Contour Bottle” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from the coca-cola company website

প্রতিবেদনটিতে কোকা-কোলার প্রথম বোতল অর্থাৎ ১৮৯৯ সাল থেকে শুরু করে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকটি বোতলের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from The Coca-Cola Company

অতঃপর, ৩১ মে ২০১৮ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন মিডিয়া ‘Insider’ এ “Here’s how Coca-Cola has changed over the past 132 years” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কোকা-কোলার প্রথম ‘ক্যান’-এর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

screenshot from Insider

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোকা-কোলা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের ক্যান বাজারে এনেছে। সবুজ ক্যানটি কোকা-কোলা ২০১৪ সালে “Coke Life’ নামে বাজারে আনে যা কোকা-কোলার অষ্টম ক্যান। 

Screenshot from Insider

প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এই ক্যানটি কোকা-কোলার অন্যান্য ক্যানের মতো খুব জনপ্রিয় না হলেও এখনো বিভিন্ন দেশে বিকি-কিনি হয়।

পরবর্তীতে, Coca-Cola Great Britain এর ওয়াবসাইট থেকে এও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, কোকা-কোলা উৎপাদনে কোকা পাতা বলে কিছু ব্যবহার করা হয় না। কোকা-কোলা তৈরীতে চিনি বা অন্য কোনো ধরণের মিষ্টি ও ক্যাফেইন ব্যবহৃত হয়।

Screenshot from Coca-Cola Great Britain Website

এরপর, প্রচারিত ছবির সাথে দাবিকৃত কোকা-কোলার উপাদান “কোকা পাতা” সম্পর্কে রিসার্চে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারী ওয়েবসাইট ‘DEA Museum’ এ ‘Coca’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot from Coca-Cola Great Britain Website

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোকেইন নামের মাদকটি কোকা নামের একটি গাছ থেকে উৎপাদিত হয়।

মূলত, কোকা-কোলা ২০১৪ সালে স্বাস্থ্যকর বা প্রাকৃতিক চিনি দ্বারা উৎপাদিত কোক বাজারে আনে, যার নাম দেয় “Coke Life” এবং কোকা-কোলার ঐ ভ্যারিয়েন্টের জন্য তারা সবুজ রঙের ক্যান বাজারে ছাড়ে। যা এখনো বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। ‘Coke Life’ এর ঐ ক্যানের ছবিটিই কোক উৎপাদনের উপাদান কোকা পাতা সবুজ থাকায় প্রথমদিকের কোকের ক্যান সবুজ ছিলো দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে কোক উৎপাদনে কোকা পাতা ব্যবহারই করা হয় না। প্রকৃতপক্ষে কোকা পাতা হচ্ছে সেই গাছ যা থেকে মাদক দ্রব্য কোকেইন উৎপাদিত হয়।

সুতরাং, কোকা-কোলার উপাদান কোকা পাতা ও এই পাতার রঙ সবুজ ছিলো বলে কোকা-কোলার প্রথমদিকের ক্যান সবুজ ছিলো দাবিতে কোকা-কোলার ‘Coke Life’ ভ্যারিয়েন্টের ক্যানের ছবিকে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img