সম্প্রতি “নর্থ ইন্ডিয়ায় জন্ম নিলো বৃদ্ধ শিশু। পবিত্র কোরআনের সূরা মুযযাম্মিল এর ১৭ নম্বর আয়াতে বলা আছে যে যখন কেয়ামত কাছে আসবে তখন এই ধরনের বৃদ্ধ শিশুর জন্ম হবে। এই শিশুটির রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে এই শিশুর বয়স ১০৫ বৎসর। তাই আবারো আল কোরআনের সত্যতা প্রমাণিত হলো” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সহ সমজাতীয় দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি নর্থ ইন্ডিয়ায় বৃদ্ধ শিশু জন্ম নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং রক্ত পরীক্ষায় শিশুটির বয়স ১০৫ বছর দেখার দাবিটিও সঠিক নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ব্যতীত ভিত্তিহীনভাবে উক্ত ছবি সহ দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ইন্টারনেটে গুজবটির শুরু সম্পর্কে কি জানা যায়
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একই দাবিতে ২০১৯ এবং ২০২১ সালে প্রকাশিত বেশকিছু ফেসবুক পোস্ট এবং প্রায় এক বছর আগে আপলোডকৃত ইউটিউব ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ফেসবুক পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।

প্রকৃত ঘটনা
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Mirror এর অনলাইন সংস্করণে “Two-week old baby abandoned by her parents after being born with rare ‘wrinkly’ skin condition” শীর্ষক শিরোনামে ২০১৫ সালের ১৭ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের ছবির সাথে দাবিকৃত ছবিটির মিল পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়,
শিশুটির বিরল ত্বকের অবস্থার জন্য বাবা মা তাকে লালনপালনে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে ২ সপ্তাহ বয়সী মেয়ে শিশুটি বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিশুটিকে দুই সপ্তাহ ধরে তার দাদা দেখাশোনা করছেন এবং তিনি শিশুটিকে পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। শিশুটি প্রেগন্যান্সির সপ্তম মাসে জন্মগ্রহণ করার ফলে তখন তার ওজন হয় ৮০০ গ্রাম। ডাক্তাররা বলেন, শিশুটির অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের কারন হতে পারে Intra-Uterine Growth Retardation(IUGR) এবং কিছু ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা।। শিশুটির অস্বাভাবিক চেহারার জন্য তার বাবা মা তাকে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
TV9 এর আঞ্চলিক সংস্করণ Marathi TV9 এর লোগোযুক্ত ভিডিও উক্ত প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম MedIndia এর অনলাইন সংস্করণে ‘Parents Anandoned Two-Week Old Baby After Being Born With Rare Skin Condition‘ শিরোনামে ২০১৫ সালের ১৯ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
মাইক্রাসেফালি টেস্টে শিশুটির নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার ধরা পড়ে যেখানে নবজাতক শিশুর মাথার পরিধি স্বাভাবিকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়। মুম্বাইয়ের ওয়াদিয়া হাসপাতালের নিও-ন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান ডাক্তার সুধা রাও এর ভাষ্য অনুযায়ী, শিশুটির এই অবস্থার সম্ভাব্য কারন হতে পারে জেনেটিক সিন্ড্রোম, ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা অথবা অভ্যন্তরীণ জরায়ু সংক্রমণ। ছোট মেয়েটির হৃদপিণ্ডে একটি ছোট ছিদ্রও রয়েছে; চিকিৎসার ভাষায় একে পেটেন্ট ফোরামেন ওভাল বলা হয়।
এছাড়াও, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম Jagran TV এর অনলাইন সংস্করণে ২০১৫ সালের ২০ জুন আলোচিত শিশুটির ছবি সহ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “জন্ম থেকে বয়স্ক চেহারার অধিকারী হওয়ায় মেয়েটিকে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তার মা। বাচ্চাটি ইন্ট্রা জরায়ু বৃদ্ধি প্রতিবন্ধকতা রোগে ভুগছে তাই শিশুটি দেখতে একজন বৃদ্ধ মহিলার মত, তার মুখ এবং শরীর কুঁচকে ভরা এবং খুব দুর্বল (অনূদিত)”।
অর্থাৎ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, সম্প্রতি নর্থ ইন্ডিয়ায় বৃদ্ধ শিশু জন্ম নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং দাবিকৃত ছবির শিশুটির বয়স ১০৫ বছর নয়। গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সে সময়ে (২০১৫ সালে) শিশুটির বয়স ছিল দুই সপ্তাহ।
মূলত, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (বিরল) রোগে আক্রান্ত মাথার পরিধি স্বাভাবিকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট এক নবজাতক শিশুর ছবি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই ইন্ডিয়ায় বৃদ্ধ শিশু জন্ম নেওয়ার দাবিতে উক্ত ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে এবং দাবি করা হচ্ছে রক্ত পরীক্ষায় জানা যায় শিশুটির বয়স ১০৫ বছর। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং শিশুটির বয়স ১০৫ বছর হওয়ার দাবিটিও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি ২০১৫ সালে নর্থ ইন্ডিয়ায় জন্ম নেওয়া বিরল ত্বকের রোগে আক্রান্ত দুই সপ্তাহ বয়সী এক শিশুর ছবি যার চেহারা বয়স্কদের মত দেখতে।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশকিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “সম্প্রতি নর্থ ইন্ডিয়ায় ১০৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ শিশু জন্ম নিয়েছে” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Mirror; Two-week old baby abandoned by her parents after being born with rare ‘wrinkly’ skin condition
- MedIndia; Parents Anandoned Two-Week Old Baby After Being Born With Rare Skin Condition
- Jagran TV; बूढ़ी पैदा हुई बच्ची, मां-बाप ने किया अपनाने से इंकार
- Rumor Scanner Own Analysis