ভারতের আত্মসমর্পণ ও ক্ষয়ক্ষতির ছবি দাবিতে ভারতের পুরোনো ঘটনার ও এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবি প্রচার


পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সংঘাতের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ভারত,,পাকিস্তানের সাথে আর যু’দ্ধের কথা মুখে আনবে না দুই রাতে ভারতের যে অবস্থা করে দিয়েছে পাকিস্তান। নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ ভারতের,ট্রাম্পের পা ধরে মধ্যস্থতার জন্য কান্না।’ ক্যাপশনে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন   এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো পাকিস্তানের কাছে ভারতের আত্মসমর্পণের এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকালীন ভারতের কোনো ছবি নয় বরং মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের কিছু পুরোনো ঘটনার ছবি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ছবি যাচাই-১

প্রথম ছবিটি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তানের কাছে ভারতের আত্মসমর্পণের চিত্র বলে দাবি করা হয়েছে।

ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে এতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর দুজন পাইলটকে স্বাক্ষর করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১০ মে থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেট প্লাটফর্মে ছবিটি ‘যুদ্ধে যাওয়ার আগে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সেনারা নিজ হাতে ইচ্ছাপত্র স্বাক্ষর করছে’ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এর আগে ছবিটি ওপেন সোর্সে খুঁজে পাওয়া যায়নি, ফলে ছবিটি সাম্প্রতিক বলেই অনুমান করা যায়। তবে, ছবিটি কোথাকার এবং কবেকার, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।

ভারতের আত্মসমর্পণের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১০ মে বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টের মাধ্যমে প্রথম ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে উভয় দেশের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি প্রচার করা হয়। এরপর পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে একই তথ্য জানান। একই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান যে, দুপুর নাগাদ ভারতীয় তিন বাহিনীর প্রধানের কাছে পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রধানের একটি ফোনকল এসেছিল। তারপরই উভয়পক্ষ স্থল, জল ও আকাশসীমায় হামলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোনো দেশের পক্ষ থেকেই আত্মসমর্পণের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি।

গণমাধ্যম সূত্রে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জানা যায়, তবে ভারতের আত্মসমর্পণের বিষয় কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, প্রচারিত পোস্টগুলোর ক্যাপশনে যে ধরণের ক্ষয়ক্ষতির দাবি করা হয়েছে, তা প্রায় পুরোটাই ভিত্তিহীন এবং অতিরঞ্জিত। উভয় দেশের পক্ষ থেকেই ক্ষয়ক্ষতির দাবি করা হয়েছে, তবে তা প্রচারিত তথ্যের চেয়ে বেশ ভিন্ন।

ছবি যাচাই-২

প্রচারিত ছবিতে সৈনিকের পোশাক পরিহিত অনেকগুলো মৃতদেহ সারিবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম The Hindu এর ওয়েবসাইটে  ২০১০ সালের ০৮ এপ্রিল ‘CRPE for joint anti-Maoist operations with State police’ শিরোনামে প্রকাশিত (২০২১ সালের নভেম্বর মাসে হালনাগাদকৃত) একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ছবিটি ২০১০ সালে ভারতের ছত্তিসগড়ের দান্তেওয়াড়ায় হওয়া মাওবাদী হামলার। এই ঘটনায় সিআরপিএফের ৭৪ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিলো।

ছবি যাচাই-৩

প্রচারিত ছবিতে বিমানবাহিনীর পোশাক পরিহিত একজন নারীকে আহত অবস্থায় মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দক্ষিণ ভারত ভিত্তিক ভারতীয় গণমাধ্যম The News Minute এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০১ জুলাই ‘IAF’s trainer aircraft crashes in Chamarajanagar’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যের সাথে আলোচিত ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ০১ জুন ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের  চামরাজনগর শহরের উপকণ্ঠে ভোগপুরায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) একটি প্রশিক্ষণ বিমান ‘কিরণ’ বিধ্বস্ত হয়। তবে, দুর্ঘটনার আগে দুই পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। স্থানীয় পুলিশ আহত পাইলটদের তেজপাল এবং ভূমিকা হিসেবে শনাক্ত করেছে, যাদের চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ছবি যাচাই-৪

প্রচারিত ছবিটিতে সৈনিকের পোশাক পরিহিত কিছু মানুষকে মাটিকে পড়ে থাকতে ও কয়েকজনকে অস্ত্র হাতে হাঁটতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবিতে একজন সৈনিকে হাতে গুলি মজুদ করার ম্যাগাজিনবিহীন লম্বা নলওয়ালা বাঁকা রাইফেল দেখা যায়।

এসব অসঙ্গতির ভিত্তিতে ছবিটিকে এআই পরীক্ষার ওয়েবসাইট Hive Moderation  এ আপলোড করে যাচাই করার মাধ্যমে দেখা যায়, ছবিটি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হওয়ার ৯৯ শতাংশের বেশি  সম্ভবনা রয়েছে।

সুতরাং, পাকিস্তানের কাছে ভারতের আত্মসমর্পণ এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকালীন ভারতের ক্ষয়ক্ষতির ছবি দাবিতে ভারতের কিছু পুরোনো ঘটনার ছবি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img